শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য রচনায় বড়ু চণ্ডীদাসের কৃতিত্ব আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর
উত্তর:- প্রাক - চৈতন্যযুগের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাব্য বড়ু চণ্ডীদাসের " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন " । ভাগবত প্রভৃতি পুরাণের কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাহিনী কে সামান্য অনুসরণ করে । জয়দেবের " গীতগোবিন্দম "এর বিশেষ প্রভাব শিরোধার্য করে এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক অমার্জিত গ্রাম্য গাল গল্পের ওপর ভিত্তি করে বড়ু চণ্ডীদাস " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন " কাব্য রচনা করেন । এতে মোট তেরোটি খন্ড বা অধ্যায় আছে । " জন্ম খন্ড " থেকে শুরু করে " রাধা বিরহ " পযন্ত এর কাহিনী বিস্তৃত ।
[ ] ভূভার হরণের জন্য গোলকের বিষ্ণুর কৃষ্ণ রূপে এবং লক্ষ্মীর রাধাচন্দ্রাবলীরূপে জন্ম গ্রহণ এবং তারপর তাদের লীলা কথায় এই কাব্যের প্রধন কাহিনীর । রাধা যে লক্ষী এবং কৃষ্ণ যে তাঁর স্বামী বিষ্ণু , তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন । বড়াই বুড়ির মুখে রাধার পরিচয় শুনে কৃষ্ণ রাধাকে চিনতে পারলেন এবং রাধা ও ক্রমে কৃষ্ণকে চিনতে পারলেন । ফলত তাদের মিলন ঘটল । কিন্তু কংস বধের জন্য কৃষ্ণ রাধাকে ফেলে মথুরায় চলে গেলে রাধা অত্যন্ত দুঃখে বিলাপ করতে লাগলেন - আর এই বিলাপের মাঝখানে কাব্যটির কয়েক পৃষ্ঠা নষ্ট হয়েছে । তাই অনুমান করা হয় রাধা বিলাপে কাব্যটি শেষ হয়নি কারণ ভারতীয় সাহিত্যের শেষে বিরহের কাহিনী দিয়ে কাব্য শেষ করার প্রথা ছিল। না । অতএব কবি শেষে রাধাকৃষ্ণের পূর্ণমিলন বর্ণনা করেছিলেন একমাত্র কৃষ্ণ চরিত্র বাদ দিলে অন্যান্য চরিত্র অঙ্গকনে কবি অশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ।
[ ] এছাড়াও ভাষা ভঙ্গিমা , চরিত্র রূপায়ণ , বিচক্ষণতা কাহিনীর বাঁধুনি ও নাটকীয় চমৎকারিত্বের বিচারে বড়ু " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন " একটি অনন্য সাধারণ কাব্য । বাংলাদেশে এ কাব্যই হল রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক প্রথম কাহিনী কাব্য সেদিক থেকেও কবির কৃতিত্ব অসাধারণ ।
কোন মন্তব্য নেই