কঙ্কাল গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উল্লেখ করো প্রশ্নোত্তর
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ কঙ্কাল ” গল্পের আমরা যে অশরীরী জীবন্ত চরিত্রটির দেখা পাই তা এক মর্ম বিধূর নারীর মন । যেখানে নারী মনস্তত্ত্বের সুক্ষ বিশ্লেষণ ঘটেছে চাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে । এখানে গল্পের মধ্য দিয়ে হঠাৎ গল্প শুরু হয়েছে অশরীরী নারীর বেদনাতুর কথার মধ্য দিয়ে , যে নারী জীবিত থাকাকালীন স্বামীকে ভয় করত , বিবাহের কিছু দিনের মধ্যে স্বামী মারা গেলে সে স্ত্রী “ বিষকন্যা ” হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং অবশেষে পিতৃগৃহে আশ্রয় নেই । এক্ষেত্রে স্বামীহারা রমণীর যেটা ঘটার কথা ছিল তার বিপরীতমুখী আচরণ দেখিয়ে গল্পকার নারী মনস্ত্বত্বের সূক্ষ দিককে ইঙ্গিত করেছেন ।
[ ] জীবিতকালে যে নারী অসাধারণ সুন্দরী , এখনকার “ কঙ্কাল ” দেখে সেই সৌন্দর্য অনুভব করা অসম্ভব এবং তখনকার দেহসৌন্দর্য দেখেও অনুমান করা সম্ভব ছিল না যে , এই দেহ একদিন অস্থিবিদ্যা শিক্ষার সহায়ক হতে পারে । একদিন তার চলা ফেরার প্রত্যেক গতিতে যে সৌন্দর্য বিচ্ছুরিত হতো তা আজ স্তম্ভ হয়ে গেছে । জীবিত অবস্থা থেকে কঙ্কাল অবস্থায় পরিণত হওয়া বড়ো করুন , বড়ো ট্র্যাজিক। এই নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুতে সে স্বস্তি পেয়েছে এবং অন্য নারীর মতো সে এটাকে ভাগ্যের পরিহাস বলে মেনে দিয়েছে এবং পিতৃগৃহে স্থান নিয়েছে । এদিক থেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতার দিকটিও প্রকাশ পায় ।
[ ] “ কঙ্কাল ” গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তুর দিকে নজর রেখে শিল্পী শিল্পিত জীবন রূপের ইঙ্গিত দিয়ে যান গল্পের নামকরনে । কখন ব্যক্তি বিশেষের নামে , কখনও বা জটিল কাহিনীর ভাবনাকে ঘিরে , কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী বিশিষ্টতায় নামকরণের প্রাসঙ্গিগতা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । “ কঙ্কাল ” গল্পের মধ্যেই নামকরণের মধ্যে দিয়ে কাহিনীর প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় স্পষ্ট হয়েছে । আপাত জড় কঙ্কালের আড়ালে একদিন যে সজীব প্রাণের আকাঙ্ক্ষা শিহরিত হতো তার কাহিনী বলেছেন রবীন্দ্রনাথ । গল্পের কথক অশরীরী নায়িকার শরীরী জীবন ছিল অপূর্ব সুন্দরী । সেই সুন্দর দেহের আড়ালে যে কঙ্কাল আছে সেটাই একমাত্র সত্য নয় । জীবিত কালে সেই যৌবনময়ী তার আত্মহতী দিয়ে দাদার বন্ধু ড: শশিশেখর কে মোহমুগ্ধ করেছিল কিন্তু শশিশেখর অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থায় করায় অপমানিতা নারী প্রতিহিংসায় জর্জরিত বিষ প্রয়োগে শশীশেখর কে হত্যা করে এবং নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে ।
[ ] “ কঙ্কাল ” গল্পের পরিবেশ রচনায় রবীন্দ্রনাথ এক অভিনব ছোটগল্পের আঙ্গিক বিন্যাস সাধন করেছেন । গল্পের কাহিনী একটি বিধবা নারীর ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী হলেও কৌশলে অভিনবত্বে রবীন্দ্রনাথ তাকে একটা ভিন্নতার মাত্রা দিয়েছেন । প্রচলিত প্লট নির্মাণের গতানুগতিকতায় “ কঙ্কাল ” গল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলেন নি তিনি । সূচনা পর্বে উত্তম পুরুষে বলা গল্প কথকের গা ছম ছম করা অনুভুতি এক ধরনের পারি পাশবিক তাকে প্রকাশ করে সন্দেহ নেই । পরিবেশ এমনই ভাবে এখানে এসেছে উৎকণ্ঠা , উদবেগ এবং আসন্ন শঙ্কার জন্ম দেয় ।
[ ] একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর গল্প “ কঙ্কাল ” গল্পটিতে একটি কঙ্কালের মুখে তার জীবিত কালের কাহিনীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । মনে হতে পারে , অতি প্রাকৃত আবহাওয়ার সৃষ্টির প্রয়াস এখানে নেই । স্রোতা কাহিনীটি কে নিজের , “ নিদ্রাহীন উষ্ম মস্তিষ্কের কল্পনা ” মনে করে স্বাভাবিক ভাবে “ চির পরিচিতের ” মতোই বিদেশিনী রমণীর সাথে কথাবার্তা চালিয়েছে । আসলে “ কঙ্কাল ” একটি চমৎকার ব্যার্থ প্রেমের গল্প । রূপ যৌবনমত্তা এক সুন্দরী বিধবা যুবতীর এক ড: যুবকের প্রতি প্রেম সঞ্চার এবং নিজে বিষপানে আত্মহত্যা এই গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু । প্রেমমনস্ত্বকের সূক্ষ বিশ্লেষণে এই গল্পটি অসাধারণ সুন্দর হয়ে উঠেছে ।
অসাধারণ ভাবে তুলা ধরা হয়েছে
উত্তরমুছুন