Breaking News

ল্যাবরেটরি গল্পের ল্যাবরেটরি কতটা গুরুত্বপূর্ণ । আলোচনা করো এবং গল্পের নামকরণের যথার্থতা বিচার করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours ল্যাবরেটরি গল্পের ল্যাবরেটরি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করো এবং গল্পের নামকরণের যথার্থতা বিচার করো প্রশ্নোত্তর laboratory golper laboratory kotota guruttopurno alochona koro abong golper namkoroner jothartho bichar koro questions answer

উত্তর:- গল্পের নামকরণ সাধারণত চরিত্র নামনুসারে হয় , চরিত্রে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী , ঘটনা অনুযায়ী বা ব্যঞ্জনা প্রধানও হয় । এই গল্পের নামকরণ হয়েছে একটা কর্ম গৃহ অনুসারে , যার নাম ল্যাবরেটরী । বোঝা যায়, গল্পে এই ল্যাবরেটরী বা গবেষণা গৃহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এ গল্পের প্রধান চরিত্রগুলির যত ভাবনা , যত তৎপরতার ,  যত উদ্বেগ সবই এই ল্যাবরটরি কে কেন্দ্র করে , তাই ল্যাবরেটরীই হয়ে উঠেছে গল্পের কেন্দ্রীয় বিষয় ।



[       ] ল্যাবরেটরির বাংলা প্রতিশব্দ গবেষণাগার । তবে ইংরেজি শব্দটি বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত ছিল বলেই রবীন্দ্রনাথ বাস্তবকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ইংরেজি শব্দটিকেই ব্যবহার করেছেন । এই ল্যাবরেটরী ঘরটা গড়ে তুলেছেন এবং সাজিয়ে তুলেছেন নন্দকিশোর মল্লিক । তিনি লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরই কাজ করতে থাকেন । তারপর ডান হাতে , বাম হাতে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে এই ল্যাবরেটরী গৃহ নির্মাণ করেন । লোহার সামগ্রী তৈরির কারবারও শুরু করেন ।



[      ] বিজ্ঞান প্রেমিক নন্দকিশোরের স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানের গবেষণার মাধ্যমে ভালো কিছু সৃষ্টি করা । তাই যথেষ্ট ব্যয় করে বৃহদায়তন ল্যাবরেটরীটি বানালেন । জার্মানি , আমেরিকা থেকে দামি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে আনলেন । নতুন ছাত্রদের শিখিয়ে পড়িয়ে গবেষণা কর্মে উৎসাহিত করে তুললেন । সোহিনীর মতো সুন্দরী , বুদ্ধিমতী , সাহসী , চালাক চতুর  মেয়েটিকে শিখিয়ে পড়িয়ে বিজ্ঞানপ্রিয় এবং একজন ল্যাবরেটরীপ্রিয় মানুষে পরিণত করে জীবন সঙ্গিনী করলেন ।



[     ] এই ল্যাবরেটরীই ছিল গল্পের দুই প্রধান চরিত্র নন্দকিশোর ও সোহিনীর সংসার জীবন । এখানেই গবেষণা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নন্দকিশোর মারা যান । এরপর তারই স্বপ্ন , নেশা , ভালোবাসাকে ল্যাবরেটরী ও তাঁর গবেষণা কর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁর স্ত্রী সোহিনী উঠে পড়ে লাগে ।  একজন যোগ্য পাত্রের হাতে এই ল্যাবরেটরী ও যুবতী কন্যা নীলা কে তুলে  নিশ্চিত হবার জন্য সোহিনী বেশ  ব্যাকুল হয়েও ওঠে ।



[       ] সোহিনীর এই ব্যাকুলতার সূত্রেএ গল্পের কাহিনীতে ঢুকে পড়েন মন্নথ চৌধুরী , রেবতী ভট্টাচার্য , পিসিমা , নীলা ,  আরো অনেকে । আর ল্যাবরেটরীকে কেন্দ্র করেই এদের যত তৎপরতা । নন্দকিশোর শুধু ল্যাবরেটরীই নয় । সঙ্গে রেখে গিয়েছিলেন বহু অর্থও । যোগ্য উত্তরাধিকারী ঠিক করে না দিয়ে যেতে পারলে মেয়ে নীলা এবং তার পার্শ্বচরেরা সবই ধ্বংস করে দিতে পারে । ল্যাবরেটরীর যোগ্য কর্নধার হিসেবে সোহিনীর পছন্দের মানুষ রেবতী ভট্টাচার্য । এই রেবতী কে রাজি করিয়ে দায়িত্ব নেবার ব্যাপারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন মন্মথ চৌধুরী । কাজের সুবাদেই সোহিনী ও মন্নথর মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব ।


[       ] রেবতীকে ল্যাবরেটরীর  তৈরির দায়িত্ব নিতে রাজি করানো এগল্পের একটা বড়ো কাজ । আচারনিষ্ঠ পিসিমার সে বাধ্য ছেলে । তাই বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা যতই থাক , পাশ্চাত্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিজ্ঞান গবেষণা করা তার হয়নি । তাই নন্দকিশোর এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ যে ল্যাবরেটরী গড়ে তুলেছেন তাতে কাজ করবার সুযোগ নিতে রেবতী অবশ্যই রাজি হবে । শুধু এই বিশ্বাস নয় সুন্দরী যুবতী মেয়ের  আকর্ষণেও আসতে পারে তাই নীলাকে সাজিয়ে গুজিয়ে সঙ্গে নিয়ে লঞ্চে করে বোটানিকালে রেবতীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছে নীলার তৈরি বলে অন্যের তৈরি ভালো ভালো মিষ্টান্ন রেবতী কে পরিবেশন করেছে , এসব কিছুরই লক্ষ্য স্বামীর তৈরি তার ভালোবাসার সামগ্রী , তাঁর স্মৃতি বা স্মারক ল্যাবরেটরী কে রক্ষা করার জন্য ।

[      ] কাজেই আমরা বলতেই পারি এগল্পের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ল্যাবরেটরী । সকলে ভাবনা চিন্তা ও তৎপরতার প্রধান অবলম্বন এই ল্যাবরেটরী । নীলা রেবতীর প্রণয় লীলার সূচনাও এই ল্যাবরেটরী কক্ষেই । পিসিমার আহ্বানে রেবতী বিদায় নিলে সোহিনীর যে উদ্বেগ বাড়বে , তাও এই ল্যাবরেটার কে নিয়েই । তাই আমরা বলতেই পারি , ল্যাবরেটরীকে গল্পের নামকরণ করা যথার্থ এ সংগতই হয়েছে ।


কোন মন্তব্য নেই