পুরুরবার প্রতি ঊর্বশী পত্রের বিষয়বস্তু আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর
উত্তর:- ঊর্বশী ও পুরুরবার প্রেম নিয়ে শতপথ ব্রাহ্মণের কাহিনীটি এরকম - সারা দিনে তিনবার পুরুরবা ঊর্বশী কে আলিঙ্গন করতে পারবেন , তবে ঊর্বশীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজা পুরুরবা তাকে নিয়ে শয়ন করতে পারবেন না । পুরুরবা যেন কোনোদিন নগ্নবেশে ঊর্বশীকে প্রদর্শন না করেন । তাহলে ঊর্বশীকে স্বর্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেন । গন্ধ বর্গণ রাত্রে গোপনে শয্যার পাশে দুটি মেশ শাবক বেঁধে রাখে এবং পরে সেটিকে চুরি করে । চোর ধরবার জন্য ঊর্বশী রাজার ঘুম ভাঙ্গান , ঘুমের ঘোরে নগ্নরূপ ঊর্বশী দেখে ফেলেন এবং ঊর্বশী শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে ফিরে যান । পুরুরবার বিরহে কাতর হলে ঊর্বশী কথা দেন প্রতি বছরের শেষরাতে তিনি পুরুরবার সঙ্গে মিলিত হবেন । পাঁচ বছর এই ভাবে মিলনের ফলে তাঁদের পাঁচটি পুত্র সন্তান হয় ।
[ ] মহাকবি কালিদাসের “ বিক্রমোর্বশীয়ম ” নাটকের কাহিনীটি একটু অন্যরকম । কেশী দৈত্য ঊর্বশীকে হরণ করলে পুরুরবা তাঁর উদ্ধার করেন । রাজার সৌজ বীর্য অভিভূত হন ঊর্বশী । স্বর্গে লক্ষ্মীর ভূমিকায় অভিনয়কালে ঊর্বশী কাকে বেশি ভালবাসেন তার উত্তরে পুরুষোত্তমের স্থানে পুরুরবার নাম উচ্চারণ করলে নাট্যচার্য ভরত তাঁকে অভিশাপ দেন মর্তে পুরুরবার পত্নী রূপে জীবন কাটাবার জন্য
মধুসূদনের দত্তের “ পুরুরবার প্রতি ঊর্বশী ” পত্রে কালিদাসের কাহিনীর অনুসরণই চোখে পড়ে , পত্রের প্রথমেই ঊর্বশী তাই জানিয়েছেন -
“ স্বর্গচূত্ত আজি , রাজা , তব হেতু আমি !
গতরাত্রে অভিনিনু দেব নাট্যশালে
লক্ষ্মী স্বয়ম্বর নাম নাটক , বারুণী
সাজিল মেনকা , আমি অম্বোজা ইন্দিরা
কহিলা বারুণী , দেখ নিরখি চৌদিকে ,
বিধুমুখী , দেবদল এই সভাতলে
বসিয়া কেশব ওই ! কহ মোরে , শুনি ,
কার প্রতি ধায় মন: ? গুরুশিক্ষা ভুলি ,
আপন মনের কথা দিয়া উত্তারনু ।
রাজা পুরুরবার প্রতি !”
এই প্রেমানুরাগের কথা ঊর্বশী পুরুরবার পদ যুগলেও নিবেদন করতে চান , নিজেকে “ দাসী ” বলে সম্মোধন করে ঊর্বশী জানাতে চেয়েছেন স্বর্গের সুখ অপেক্ষা পুরুরবার সঙ্গ সুখ তাঁর কাছে অনেকবেশী প্রীয়তর ,
“ যদি কৃপা কর ,
তাও কহ: যাব উড়ি ও পদ আশ্রয়ে
পিঞ্জর ভাঙ্গিলে উড়ে বিহঙ্গিনি যথা
নিকুঞ্জে ! কি ছাড় স্বর্গ তোমার বিহনে ?”
পুরুরবার বীরত্ব , রসময় বাণী , ঊর্বশীকে উদ্ধার করার চিত্র এ সব কল্পনা করে আনন্দিত হন ঊর্বশী । স্বর্গের অপ্সরী হয়েও ঊর্বশী স্বীকার করেন পুরুরবার মতো রাজাকে পেয়ে “ নরকুল ধন্য ” । পুরুরবার মতো রাজার সৌন্দর্য , সৌয , সুভাষণে , মোহিত হয়ে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে ঊর্বশী বলেন
“ সুরবালা মন তুমি ভুলালে সহজে ,
নররাজ ! কেনই বা না ভুলাবে , কহ ?
সুরপুর চির অরি অধীর বিক্রমে ,
তোমার বিক্রমাদিত্য । বিধাতার ঘরে ,
বজ্রীর অধিক বীর্যতব রণস্থলে ”
পুরুরবার সঙ্গে মিলনের জন্য ঊর্বশী “ কামবিষে ” জ্জ্বরিত হয়েছেন , পুরুরবার একবার আজ্ঞা দিলেই তিনি সুরপুর ত্যাগ করে রাজার চরণে আশ্রয় নেবেন , কল্পতরু বৃক্ষের কাছে নত হয়ে এইসব মনের কথা ঊর্বশী প্রকাশ করেছেন এবং পত্রাকারে তা লিপিবদ্ধ করেছেন । এই পত্র ঊর্বশী তাঁর প্রিয় সখী চিত্রলেখা মারফৎ পাঠিয়ে দিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছেন । মধুসূদন অসামান্য দক্ষতায় স্বর্গের ঊর্বশী কে মর্ত্যের রক্ত মাংসের মানবী করে তুলেছেন । ভালোবাসার জন্য স্বর্গসুখও যে অনায়াসে ত্যাগ করা যায় ঊর্বশী সেই কথাটাই এই পত্রে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন ।
লক্ষ নের পতি সুপর্ণা
উত্তরমুছুন