বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নাথধর্ম ও নাথসাহিত্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours নাথধর্ম ও নাথসাহিত্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর

উত্তর:- নাথ ধর্ম সম্প্রদায় বাংলাদেশের সাধন ক্ষেত্রে একটি অতি প্রাচীন শাখা । শুধু বাংলাদেশের নয় গোটা উত্তর ভারতে শৈব যোগীদের ধর্মীয় ও সাহিত্যিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । তাঁরা মুখ্যত শৈব কায়াসাধক । শৈব নাথ ধর্ম মত ও বিচিত্র ধর্মবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । দশম শতাব্দীর দিকে সারা উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতে গোরক্ষ পন্থী নাথ সম্প্রদায় ছিল । তাদের ধর্ম কর্ম ও আচার আচরণ কে কেন্দ্র করে অনেক ছড়া পাঁচালি , লোকগীতি , আখ্যান কাব্য পাওয়া গেছে , সাহিত্যের ইতিহাসের দিক থেকে যার মূল্য স্বীকার করতে হবে ।


[       ] বাংলা সাহিত্যে আদিনাথ শিব , পার্বতী , মিননাথ , গোরক্ষ , জালন্ধরীপাদ অর্থাৎ হাড়িপা , রানী ময়নামতী কানুপা ময়নামতীর একমাত্র সন্তান গোপীচন্দ্র বা গোবিন্দ চন্দ্রকে নিয়ে কিছু কিছু ছড়া পাঁচালি ও কাব্য কাহিনী লেখা হয়েছে । এর মধ্যে মিননাথ ও গোরক্ষনাথের কাহিনীকে কেন্দ্র করে একাধিক পুঁথি লেখা হয়েছে । গোরক্ষনাথ কতৃক পথ ভ্রষ্ট গুরু মিননাথ কে উদ্ধার করার আর একটির নাম “ মীনচেতন ” । দুটির বিষয় একই । “ গোরক্ষবিজয় ” এর রচয়িতা হলেন শেখ ফয়জুল্লার মৌলিক ছড়া পাওয়া গেছে । বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে , বিশেষত উত্তরবঙ্গের কৃষক সমাজে রাজা গোপীচন্দ্র ও তাঁর মাতা রানী ময়নামতীর সমন্ধে অনেক অলৌকিক কাহিনী ছড়া পাঁচালি আকারে বিষয়ক সকরুণ কাহিনী গড়ে উঠেছে , কোনো কোনো প্রদেশের লোকনাট্যের ও এ কাহিনী প্রভাব দেখা যায় । অনেকে এ কাহিনীর বাস্তব সত্তাও ঐতিহাসিকতা নিয়ে অনেক অনাবশ্যক গবেষনা করেছেন । এই কাহিনীর কেন্দ্র হচ্ছে রংপুর । ময়নামতী ও গোপীচন্দ্রের কাহিনীটি নাথসম্প্রদায়েরই অন্তভূক্ত । সমাজের কতকটা এই আকারে প্রচলিত ছিল । এখনও আছে । এই কাহিনীর একটিমাত্র পুঁথিগত পরিচয় পাওয়া গেছে , তাতে এর পরিণাম অন্য ধরনের । তাহল “ গোপীচন্দ্রের গীত ”।


[       ] এই পুঁথিটি তে দুর্লভ মল্লিক , ভবানী দাস , সুকুর মোহাম্মদ প্রভৃতি কবির ভনিতা পাওয়া যায় । এর ভাষা মার্জিত , বর্ণনার মধেও গ্রন্থন নৈপুণ্যের আভাস আছে । মনে হয় কৃষক সমাজে ওপরের কাহিনীটি প্রচলিত ছিল । পরবর্তী কালে কোনো কোনো হিন্দু মুসলমান কবি সেই লোকগাঁথাটিকে মেজে ঘষে একটি আখ্যানকাব্যের রূপ দিয়েছেন । এছাড়াও কিছু ছড়া পাঁচালি ও পুঁথির পরিচয়ও পাওয়া যায় । গোপীচন্দ্রের গান সম্পর্কে অনেকেই আগ্রহী ছিলেন । তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গ্রিয়াসন , বিশেম্বর ভট্টাচার্য প্রমুখ । দুজন উল্লেখযোগ্য পুঁথি সাহিত্যিক হলেন ভবানী দাস , ও সূকুর মোহাম্মদ । এছাড়াও কিছু গান রচিত হয়েছে । সেগুলি হল “ যোগীর গান ” “ যুগীকাচ ” “ গোথসংহিতা ” এবং “ যোগচিন্তমনি ” ।


[       ] নাথ ধর্ম ও দর্শন সংক্রান্ত যেমন আখ্যানকাব্য ও ছড়া পাঁচালি প্রভৃতি রচিত হয়েছিল , তেমনি আবার বিশুদ্ধ তত্ত্ব দর্শন সংক্রান্ত কতক গুলি ছড়া পদও পাওয়া যায় । যাতে কোনো কাহিনী নেই । শুধু সাধনভোজনের গৃঢ ইঙ্গিতে পূর্নপদ বা বিচ্ছিন্ন পংক্তি আছে । এই গান ও ছড়া গুলি গুহ্য সাধন ভজনের ইঙ্গিতবাহি , নাথ সম্প্রদায়ের বাইরে এর চল নেই । অবশ্য এখনও এগুলি যুগী সম্প্রদায়ের মধ্যে গীত হয় , তবে এগুলির কাব্যগুন নিতান্তই ক্ষীণ , সুতরাং এখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই । শৈব নাথ ধর্ম দেড়হাজার বছর ধরে সমগ্র ভারতবর্ষেই চলেছে এবং এখনও জীবিত আছে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন