সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের গদ্য গ্রন্থগুলির পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা সাম্মানিক অনার্স bengali honours বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের গদ্য গ্রন্থগুলির পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর bangla godder bikashe rammohon rayer goddo grontho gulir porichoy dao questions answer


প্রশ্ন : বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের গদ্য গ্রন্থগুলির পরিচয় দাও ।


উত্তর : যে সব পন্ডিতগণ বাংলা গদ্য রচনায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রাজা রামমোহন রায় । শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকই স্বপ্ন , তাঁর বাইরেও নানা বিষয় তিনি পুস্তক রচনা করেন । সেই কারণে রামমোহনের গদ্যভাষা নানা রূপে গুনে সর্বসমক্ষে প্রতিষ্ঠা পায় । 


[        ] বলাবাহুল্য তিনিই বাংলার নবজাগরণের প্রথম ও প্রধান পথপ্রদর্শক । ধর্মসংস্কার , কী সম্পদ সংস্কার , কী শিক্ষা সংস্কার সর্বক্ষেত্রেই তাঁর আবেদন অনস্বীকার্য । নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাঁকে পথ চারণা করতে হয়েছে । আবার তিনিই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করেছেন । এই সামাজিক সমস্যা যত গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে তাঁর হাতের লেখনী হয়েছে তত বেশি শক্তিশালী । আর সেই লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে বাংলার চিরায়ত গদ্যভাষা । এই গদ্যভাষাই ছিল যে কোন সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রধান মাধ্যম । তাই তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা গদ্যভাষা বলিষ্ট ও গতিশীল রূপ পেয়েছিল ।

[        ] রামমোহনের রচিত গ্রন্থগুলি হল ১. বেদান্ত গ্রন্থ , ২. বেদান্ত সার , ৩. পাঁচ টি উপনিষদের অনুবাদ . ৪. সমাজ ধর্মনীতি শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে উক্তি প্রতুক্তিমূলক রচনা :( ক ) উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগিশের সহিত বিচার , ( খ ) ভট্টাচার্যের সহিত বিচার , ( গ ) গোস্বামীর সহিত বিচার , ৫. ব্রথপসনা , ৬ . সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক , ৭. গৌড়ীয় ব্যাকরণ ।


১। বেদান্ত : এটি রাজা রামমোহন রায়ের বেদান্তগ্রন্থের বঙ্গানুবাদ । ভূমিকাংশে তিনি বিরুদ্ধবাদীদের মতকে খন্ডন করে বলেন যে 


( ক ) ঈশ্বর নিরাকার হলেও তাঁর উপাসনা করা যায় ।


( খ ) ঈশ্বরের পথ ধরে অন্যান্য যে কোন পথ ত্যাগ করা সম্ভব ।


( গ ) ঈশ্বর অলৌকিক , তাঁর লৌকিক প্রতিমূর্তি পাওয়া সম্ভব নয় । 


বেদান্তগ্রন্থে রামমোহন ব্রহ্মতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে ব্রহ্মাকেই উপাসনার প্রধান উপাদান বলে মনে করেছেন ।


২। বেদান্তসার : এই গ্রন্থে রামমোহন বেদান্ত গ্রন্থের আসল স্বরূপ বের করে ক্রমান্দয়ে সাজিয়েছেন । এমনকি , তিনি যে এই বিষয়বস্তুকে নতুন করে সাজিয়েছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন । রামমোহন যে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলেছেন , তা তিনি এই গ্রন্থে আরও সহজ করে ব্যাখ্যা করেছেন সাধারনের কাছে । ফলে ব্রহ্মার উপাসনার পথ আরও সহজ হয়েছে ।

৩। উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগিশের সহিত বিচার : রামমোহনের অন্যান্য শাস্ত্রীয় বিচার মূলক গ্রন্থগুলির মধ্যে এটি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য । উৎসবানন্দ নামে এক বৈষ্ণব সাধকের সঙ্গে রাম মোহনের বিতর্কের ভিত্তিতে এই আখ্যায়ীকাটি রচিত । উৎসবানন্দের , মতকে খন্ডন করে রামমোহন প্রমাণ করেন যে , নিরাকার চৈতন্য স্বরূপ পরমব্রহ্মই জগতে একমাত্র সত্য ।


৪। ভট্টাচার্যের সহিত বিচার : এই গ্রন্থ টি মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের “ বেদান্ত চারিত্রকার ” উপরে লিখিত হয়েছিল । শাস্ত্রীয় যুক্তি তর্কের দ্বারা বিচার করে রামমোহন ভট্টাচার্যের মতবাদকে লঙ্ঘন করেছেন । ভট্টাচার্য মতে পরমাত্মা নিরাবয়ব নন তাঁরও দেহে আছে । এই মতবাদকে রামমোহন স্বীকার করে নিতে পারেননি । নিয়তি এটি ব্যাখ্যা করে বলেন , ঈশ্বর অতীন্দ্রিয় তাঁর প্রতিমূর্তি কখনই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হতে পারে না । এছাড়া তিনি ভট্টাচার্যের প্রতিমা পূজার সপক্ষে যুক্তি লঙ্ঘন করে বলেন , যে সকল ব্যাক্তি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করতে জানে না যে তারা কেবল প্রতিমা পূজাতে লিপ্ত থাকেন ।

৫। সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক - নিবর্তক সম্বাদ এবং সহমরণ বিষয়ক : এই গ্রন্থ তিনটিতে তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থার একটি সুন্দর ছবি ফুটে উঠেছে । এখানে প্রবর্তক ও নীবর্তক দুই শ্রেণীর প্রতিনিধিকে উপস্থাপিত করে সহমরণের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছেন । প্রবর্তক অঙ্গিরা ঋষির মত পোষণ করে সহমরণের পবিত্রতাকে প্রমাণ করেছেন । অন্যদিকে নীবর্তক মনু , যাজ্ঞবল্ক এই সমস্ত ঋষির কথা উল্লেখ করে সহমরণের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে ।



[       ] সহমরণ সম্বন্ধে দ্বিতীয় গ্রন্থে রামমোহন মানবিকতার কথা ভুলে সহমরণের পক্ষে যুক্তি দেখান । সহমরণ বিষয়ক তৃতীয় গ্রন্থে রামমোহন বিপ্রনামা ও মুগ্ধবোধ ছাত্র নামে দুটি চরিত্রের মুখ দিয়ে সহমরণ বিষয়ক যুক্তি তর্কের অবতারণা ঘটিয়েছেন । গীতাতেও যে সহমরণ কার্যের বিরুদ্ধে নিষেধ আছে তা তিনি বিপ্রনামা চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন ।


রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে প্যারিচাঁদ মিত্রের অবদান প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা সাম্মানিক অনার্স bengali honours বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে প্যারিচাঁদ মিত্রের অবদান প্রশ্নোত্তর bangla probondho sahitya parichand mitter obodan questions answer


প্রশ্ন : বাংলা  প্রবন্ধ সাহিত্যে প্যারিচাঁদ মিত্রের অবদান ।


উত্তর:- প্যারিচাঁদ মিত্র ( ১৮১৪ - ১৮৮৩ ) টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে কয়েকটি গদ্য গ্রন্থ রচনা করেন , এবং ওই নামেই পরিচিত হন । সেকালের শিক্ষিত বাঙালী সমাজে প্যারিচাঁদ অগ্রগণ্য এবং মান্য সম্মানীয় ব্যাক্তি ছিলেন । নব্যচিন্তা ও ভাব ভাবনা , স্ত্রীশিক্ষারপ্রসার ও সমাজ সংস্কার নানা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য । কৃষিবিদ্যা ও চর্চা ব্যাবসা বাণিজ্য পরিচালনা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া গেছে । এসবের ঊর্ধ্বে বাংলা গদ্য ভাষায় বিবর্তনে তাঁর বিশেষ অবদান সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য , যাঁর প্রভাব আজ পর্যন্ত অনুভূত হয়ে থাকে । বন্ধু রাধানাথ সিকদারের সহায়তায় তিনি “মাসিক পত্রিকা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন , যাঁর প্রধান লক্ষ্যই ছিল স্ত্রীশিক্ষার প্রসার । লেখা ও কথ ভাষায় একপ্রকার মিশ্রন রীতিই এই “মাসিক পত্রিকা”র প্রধান বিশেষত্ব ছিল । অক্ষয়কুমার , বিদ্যাসাগর এবং তাঁদের ভাবশৈলীর উত্তরাধিকারীদের গুরু গম্ভীর সাধু রীতির ভাষা সহজ বোধগম্য হবে না বুঝতে পেরে , স্ত্রীলোক ও অল্পশিক্ষিত ব্যাক্তিদের বোধগম্য এবং পাঠযোগ্য গদ্যভাষার কথা ভাবতে গিয়ে তিনি কলকাতার কথভাষার ওপর নির্ভর করেন ও তা অবলম্বন করে এই অভিনব গদ্যরীতির উদ্ভাবন ও ব্যাবহারে ব্রতী হন । যদিও এই অভিনব ভাষারীতি তাঁর পূর্বেও অল্পসল্প অবলম্বিত হতে দেখা গেছে , তথাপি আদ্রন্ত এই অভিনব ভাষায় সুষ্ট , সুসামঞ্জস এবং সুগঠিত পদাম্বয় সমন্ধিত রূপ উদ্ভাবন ও প্রয়োগের কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য ।


[        ] প্যারিচাঁদের কয়েকটি গ্রন্থ আখ্যান জাতীয় এবং উপদেশাত্মক , যেমন -  আলালের ঘরের দুলাল , মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায় , রামরঞ্চিকা , অভেদি , আধ্যাত্মিকা , ইত্যাদি । এছাড়া কৃষিতত্ত্ব বিষয়ক ‘ কৃষিপাঠ ’ তাঁর রচনাবলীর অন্তভুক্ত । অবশ্য যে গ্রন্থের জন্য টেকচাঁদ ঠাকুরের বিস্তৃত পরিচিতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সেটিই তাঁর প্রথম রচনা “ আলালের ঘরে দুলাল ।” মূলত এই গ্রন্থের ভাষারীতির প্রসঙ্গেই বঙ্কিমচন্দ্র লেখককে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁর গদ্যভাষার মূল্যায়ন ও নির্ণয়ে মন্তব্য করেছিলেন “ সংস্কৃত প্রিয়তা ও সংস্কৃতানুকারিতহেতু বাঙ্গালা সাহিত্য অত্যন্ত নিরস , দুর্বল এবং বাঙ্গালী সমাজে অপরিচিত হইয়া রহিল । টেকচাঁদ প্রথমেই এই বিষবৃক্ষের মূলে কুঠারঘাত করিলেন । তিনি ইংরেজিতে সুশিক্ষিত , ইংরেজিতে প্রচলিত ভাষার মহিমা দেখিয়াছিলেন এবং বুঝিয়াছিলেন । তিনি ভাবিলেন , বাঙলার প্রচলিত ভাষাতেই  বা কেন গদ্যগ্রন্থ হইবে না । যে ভাষার সকলে কথোপকথন করে , তিনি সেই ভাষায় আলালের ঘরের দুলাল প্রণয়ন করিলেন । সেইদিন হইতে বাঙ্গালা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি , সেইদিন হইতে শুষ্ক তরুর মূলে জীবনবারি নিষিক্ত হইল । বস্তুত , বঙ্কিমচন্দ্রের কথা সর্বাংশে সত্য , এবং ‘বাঙ্গালার প্রচলিত ভাষা’র যে কি গুরুত্ব তা আমরা এখণও মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে থাকি । প্যারিচাঁদ সুপরিকল্পিতভাবে যে ‘ প্রচলিত রীতি ’ বাংলা গদ্য গ্রহণ করেছিলেন তারই মার্জিত পরিশ্রুত অপেক্ষাকৃত সাহিত্যেগুন ঋগ্ধ গদ্যভাসায় উত্তরকালে বাংলা কথাসাহিত্যের অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে । এদিক থেকে প্যারিচাঁদের ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য । ইতিপূর্বে “ কথোপকথন ” প্রভৃতি গ্রন্থে লোকের মুখের ভাষা উদাহরণ হিসাবেই মাত্র স্থান হয়েছে , প্যারিচাঁদ সেই ভাষাকে আরও পরিণতি সহকারে সাহিত্যিক ভাষার আসনে সমমর্যাদায় আসীন করেন । তাঁর গদ্য সাধুরিতিটি কিন্তু সম্পূর্ন পরিত্যক্ত হয়নি । সাধুভাষার কাঠামোটি ঠিকই আছে । কথা , শব্দ এবং মাঝে মাঝে বাগভঙ্গির প্রয়োগ করে তিনি তাকে সরল , সহজ এবং বোধগম্য করে তুলেছেন । একটি উদাহরণ 


“ বাবুরামবাবু চৌগোপূপা - নাকে তিলক -কস্তা পেয়ে ধূর্তিপরা - ফুলপুকুরে জুতা পায় - উদর গণেশের মতো - কোঁচান চাদরখানি কাঁধে - একগাল পান - ইতস্তত: বেরাইয়া চাকরকে বলছেন - ওরে হরে ! শ্রীঘ্র বালি যাইতে হইবে , দুই চার পয়সার এক খানি চলতি পানসি ভাড়া কর তো । বড় মানুষের খানসামারা মধ্যে মধ্যে বেয়াদব হয় , হবে বলল , মোসায়ের যেমন কান্ড । ভাত খেতে বস্তেছিনু - ডাকাডাকিতে ভাত ফেলে রেখে এস্তেছি ।..... চলতি পানসি চার পয়সায় ভাড়া করা আমার কর্ম নয় - একি থুতকরি দিয়ে ছাতু গোলা ?”

[        ] আলাল এর ভাষার সর্বোত্তম গুন বৈশিষ্ট্য , “ সাহিত্যিক গদ্য কে জীবনের সান্নিধ্যবর্তী করা আদি আধুনিক আগ্রহ অতি অঙ্কুরিত হতে আরম্ভ করেছিল ।” প্যারিচাঁদ যতদূর সম্ভব সুখের কথাকে বাক্যে প্রয়োগ করতে চেষ্টা করেছেন । সংস্কৃত শব্দ ও সমাজবদ্ধ পদের আড়ম্বর নেই । তদ্ভব ও দেশী শব্দের ব্যাবহারের দিকে বেশি ঝোঁকেননি । দেশি , তদ্ভব শব্দের পাশাপাশি ধ্বন্যাত্মক শব্দের ব্যাবহারে ভাষাকে গতিময় এবং জীবন্ত করে তুলতে চেষ্টা করেছেন । অভিশ্রুতি , অপিনিহিত ,স্বরসঙ্গতির ব্যাবহারের চেষ্টা না থাকায় বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সাধুরীতির সহজ সুগম গদ্যরীতিটিই তাঁর অবলম্বনীয় মনে হয়েছিল । তবে সাধু সংস্কৃত ভিত্তিক গদ্যভাষা নয় , কথারীতির ভাষাইটিই তিনি পছন্দ করতেন । প্যারিচাঁদ বড় লেখক নন , কিন্তু ভাষার ক্ষেত্রে তাঁর আন্দোলন ও সচেতন ভূমিকা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় ।


শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

“ দশরথের প্রতি কৈকেয়ী ” পত্রটি বিশ্লেষণ করা প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours দশরথের প্রতি কৈকেয়ী পত্রটি বিশ্লেষণ করা  প্রশ্নোত্তর Doshorother proti koikeyi potro ti bishleshon koro questions answer

উত্তর:- “ দশরথের প্রতি কেকেয়ী ” পত্রে রামায়ণের সর্ব নিন্দিত নারী কৈকেয়ীকে আমরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বোধের উদ্দীপ্ত হতে দেখি । চারিত্রিক গুণাবলির বিচারে কৈকেয়ী অবশ্যই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন , তথাপি তার প্রতি কবি  মধুসূদনের সহানুভূতি ছিল আন্তরিক । তিনি পুত্রস্নেহে অন্ধ ,  স্বার্থপরায়না ও প্রতিহিংসা কাতর , তথাপি তাঁর ব্যক্তিত্ব অনস্বীকার্য ।

[        ] দশরথ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্রে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত  করেন । যখন রাজ্যভিষেকের বিশাল আয়োজন চলতে থাকে , সমস্ত রাজপুরী যখন উৎসবে মাতোয়ারা ও মগ্ন তখন দাসী মন্থরা কুপরামর্শ দেয় রাণী কৈকেয়ী কে । তার প্ররোচনায় রাণী কৈকেয়ী রাজার পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভয়ংকর দুটি বর চেয়ে বসেন । সেই বর দুটি হল 


    ১. রামের চোদ্দ বছরের বনবাস ।


    ২.ভরতের রাজ্যভিষেক ।

দশরথের সমস্ত কাকুতি মিনতি ব্যর্থ হয় । কৈকেয়ী জানিয়ে দেন বর দুটি না পেলে তিনি আত্মহত্যা করবেন ।  কিন্তু মধুসূদন “ দশরথের প্রতি কৈকেয়ী ”  পত্রকাব্যে দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ।


   ১. বৃদ্ধ রাজা দশরথের শৈস্ত্রনতা ।


২.  রাজার সত্যভঙ্গ করার অভিমান বুকে নিয়ে কৈকেয়ী আত্মহত্যা করার প্রতিজ্ঞা । আত্মহত্যার পূর্বেই বিশ্বজনকে তিনি জানিয়ে যেতে চান রঘুকুলপতি দশরথের ধর্মভ্রষ্টতার কথা । কেননা প্রাচীণ রঘুকূলের বিপুল গৌরবের মূলে ছিল সত্যরক্ষার ঐকান্তিক প্রয়াস । কুলমান নয় , কৈকেয়ীর কাছে এখানে বড়ো হয়ে উঠেছে তাঁর ভয়ঙ্কর ক্ষোভ । মধুসূদন রামায়ণের চরিত্র কৈকেয়ীকে নিয়ে এক চমৎকার শিল্প সৌন্দর্য নির্মাণ করেছেন এই পত্রিকায় ।

কৈকেয়ী দশরথকে তীব্র বিদ্রুপ করে বলেছেন যে তিনি পরম অর্ধম্মাচারী । অনেকের মতে এটি অনুযোগ পত্রিকা কিন্তু এখানে আমরা কেন অনুযোগকারিনি নয় , কৈকেয়ীকে এক বিদ্রোহীনি নারী রূপে দেখতে পায় । কৈকেয়ী চরিত্রটি ব্যক্তিত্বের অহমিকায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে , মর্ম পীরিতা নারীর অন্তরের অভিমান প্রতি পংক্তি তে ফুটে উঠেছে । এখানে এক প্রগতিশীলা নারীর আপন অধিকার প্রতিষ্ঠার সচেতনতা পরিলক্ষিত হয় । এদিক থেকে কৈকেয়ী চরিত্রটি অভিনবত্ব লাভ করেছে ।


দাসী মন্থরার মুখে কৌশল্যার পুত্র রামের রাজ্যভিষেক হচ্ছে শুনে কৈকেয়ী ব্যাঙ্গাত্মক প্রশ্নবাণে দশরথ কে জর্জরিত করে তুলেছেন তিনি হঠাৎ উৎসবে কারণ জানতে চেয়েছেন । রানী কৈকেয়ী জিজ্ঞাসা করেন যে , রাজা দশরথ কোনো শত্রুবিনাশ করার জন্য কি অকালে এই যজ্ঞ শুরু করেছেন , নাকি রাজার কোনো পুত্র জন্ম গ্রহণ করেছে । কিংবা কন্যার বিবাহ স্থির হয়েছে । অথবা বৃদ্ধা রাজা কি এই বয়সে কোনো রসবতী নারীর  মধুর সহচর্য লাভ করেছেন

                পাইলা কী পুন: এবয়সে  

                রসবতী নারী ধনে , কহ রাজ ঋষি ।


এভাবে কৈকেয়ী তার অন্তরের বেদনাকে তীব্র তীক্ষ্ণ ব্যাঙের দ্বারা উৎসারিত করে দিয়েছেন । দশরথ নিজ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে রাম কে সিংহাসনে বসাচ্ছেন , বঞ্চিত হচ্ছে তাঁর পুত্র ভরত । পুত্রের দাবী ভূলুণ্ঠিত , এতে কৈকেয়ীর অনুযোগ স্বাভাবিক । কিন্তু সেই সঙ্গে সত্যভ্রষ্ট ধর্ম চ্যত দশরথ কে ধর্ম মহিষী হিসেবে তিনি ধর্ম পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব বোধ উদবুদ্ধ হয়েছেন । অপ্রিয় সত্য বাক্য বলেছেন তিনি 


     “ অসত্যবাদী রঘুকুল পতি !

      নিলজ্জ ! প্রতিজ্ঞা তিনি ভাঙেন সহজে ।

      ধর্মশব্দ মুখে , গতি অধর্মের পথে ।”

তীব্র অভিযোগ অনুযোগ ব্যাঙের জ্বালা ও প্রতিহিংসা পূর্ণ কটুক্তিতে এই কবিতা অগ্নি স্বাবী । তার চরিত্রে পুত্র স্নেহ সর্বাধিক পুত্রের স্বাথহানি ঘটায় কৈকেয়ী ন্যায় অন্যায় রুচিশীলতা বর্জন করে দশরথকে বারবার আঘাত হেনেছেন । রামচন্দ্রের গৌরবও তিনি স্বীকার করেননি ।


         কি বিশিষ্ট গুন 

         দেখে রামচন্দ্র দেব , ধর্ম নষ্ট করে 

         অভীষ্ট পূর্নিতে তার , রঘু শ্রেষ্ট তুমি । 

পূর্ব প্রতিশ্রুতি স্মরণ করে দেওয়া সত্ত্বেও দশরথের চৈতন্যদয় না ঘটলে কৈকেয়ী দেশ দেশান্তরে ঘুরে পথিক গৃহস্থ রাজা কাঙাল ,  তাপস যেখানে পাবেন তার কাছে বলে বেড়াবেন “ পরম অর্ধম্মাচারী রঘুকুল পতি ।” এমনকি শুকসারি পুষেও একথা শিখিয়ে দেবেন । পল্লী বালাদেরও একথা শোনাবেন । এভাবে সত্যভ্রষ্ট দশরথের কথা সর্বত্র ব্যক্ত করে তিনি পাপ পুরী ত্যাগ করে চিরতরে চলে যাবেন । ভরত কে পাঠিয়ে দেবেন মাতুলালয়ে ।


ক্ষুব্ধ রুক্ষ রুদ্র কৈকেয়ী পত্রটি যেন এক দুরন্ত বহিশিখা । কৈকেয়ী এক কঠিন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যময়ী হয়ে উঠেছে মধুসূদনের হাতে । দৃপ্ত রৌদ্ররসের জীবন্ত প্রতিমূর্তি কৈকেয়ী রূপটি তাতে কোনো সংশয় নেই ।



 


শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

নীল ধ্বজের প্রতি জনা পত্রটি বিশ্লেষণ করে জনার মাতৃত্ববোধের স্বরুপ নির্ণয় করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours নীল ধ্বজের প্রতি জনা পত্রটি বিশ্লেষণ করে জনার মাতৃত্ববোধের স্বরুপ নির্ণয় করো প্রশ্নোত্তর nil dhorjer proti jona potroti bishleshon kore jonar martitobodher sworup nirnoy koro questions answer

উত্তর:- “ নীল ধ্বজের প্রতি জনা ” পত্রটি  কাশীরাম দাসের মহাভারত । এখানে আছে মাতিম্মতি রাজ নীলধ্বজের স্ত্রী জনার কথা । গঙ্গা ভক্ত জনার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে প্রবীর । পাণ্ডবদের অশ্বমেধের ঘোড়া পুত্র প্রবীর বন্দি করেছিল । কৃষ্ণভক্ত নীলধ্বজ সেই ঘোড়া ফিরিয়ে দিতে বললে পুত্র প্রবীর ফেরত না দিয়ে মাতা জনার অনুপ্রেরণায় অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যুদ্ধে প্রবীর মৃত্যুবরণ করে । তখন স্বয়ং জনা যুদ্ধে অগ্রসর হলে কৃষ্ণের কৌশলে পান্ডবরা রক্ষা পায় । পুত্রশোকে অধীর হয়ে জনা গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেয় ।

[        ] মধুসূদন জনার এই  কাহিনীকে অবলম্বন করেছেন তার পত্রে । গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিয়ে সমস্ত জ্বালা জুড়াবার পূর্ব মুহূর্তের পত্র এটি । অর্জুনের ওপর রাগ স্বামীর প্রতি অভিমান এবং পুত্র প্রবীরের প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বাৎসল্য । স্বামীর প্রতি দোষারোপ করা যে পাপ সে কথাও উল্লেখ করেছেন স্বামীর প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই


[         ] জনা পত্রিকার ছত্রে মর্ম পীড়িত নারী হৃদয়ের জ্বালা ও অভিমান ফুটে উঠেছে । পুত্রের মৃত্যুতে জনার বিলাসে পুত্র শোকাতুরা জননীর বিলাপ অশ্রু নেই আছে শুধু অগ্নিময়ী প্রবাহ ।  কাব্যেৎকর্ষের বিচারে , এই পত্রিকাটি সর্বাঙ্গ সুন্দর এবং আবেদন মর্মভেদী । অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে পুত্র প্রবীর নিহত হওয়ার সত্ত্বেও রাজা নীলধ্বজ ক্ষত্রধর্ম বিস্তৃত হয়ে সেই অর্জুনের সঙ্গে সখত্যা স্থাপন করে হস্তিনাপুরে যেতে চাইছেন । রাজপুরীতে বিশেষ সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করেছেন । স্বামীর বিসদৃশ আচরণে ব্যাথিত জনার হৃদয়ে প্রতিশোধানল প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠল । অর্জুন অন্যায় সমরে বালক প্রবীরকে নিহত করেছেন কোথায় শত্রুর রক্তে শোক নির্বাপিত হবে তা না করে নীলধ্বজ অর্জুনের মনোরঞ্জনের জন্য রাজসভায় নৃত্য গীতাদির আয়োজন করেছেন ।

[       ] গঞ্জনায় তিরস্কারে জনা অর্জুনের অন্যায় যুদ্ধ ও চারিত্রিক দুর্বলতা কথা শুনিয়ে দিলেন স্বামীকে । তবুও সংশয় থাকায় জনা পুঞ্জিভূত ক্রোধে ফেটে পড়লেন তিনি । কুন্তী দ্রোপদী ও ব্যসদেব সহ অর্জুনের জন্ম ও চরিত্রগত কলঙ্কের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন 


       “ নরণারায়ন পার্থ ! কুলটা যে নারী 

      বেশ্যাগর্ভে তার কী হে জনমীলা আসি ।”

প্রবীরের মৃত্যুতে নীলধ্বজ উদাসীন । পুত্রশোকে অধীর । কিন্তু তার চেয়েও বেশি অধীর হয়েছেন স্বামীর আচরণ । জনার মধ্যে স্বাধীন চিন্তাশক্তির প্রকাশ ঘটতে আমরা দেখি । প্রচলিত ও  সর্বজন স্বীকৃত মতামতকে নির্দ্বিধায় মেনে নেননি তিনি । উনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ আত্মমর্যাদা এবং যুক্তিবাদী বিশ্লেষণধর্মী প্রবণতা দেখা যায় জনা চরিত্রে । পান্ডবদের সর্বস্বীকৃত দেবত্বে তিনি অবিশ্বাসী ব্যসদেবও তাঁর তীক্ষ্ণ যুক্তিজালে জজরিত । অর্জুনের বীরত্ব খ্যাতির বিরূদ্ধেও জনার বক্তব্য যুক্তিযুক্ত 

         ছদ্মবেশে লক্ষ রাজে দলিল দুর্মতি 

         স্বয়ম্বরে ! যথা সাধ্য কে যুঝিল কহ ,

        ব্রাহ্মণ ভাবিয়া তারে , কোনো ক্ষত্ররথী ,

        সে সংগ্রামে ? রাজদল তেই সে জিতিল ।


এছাড়া কৃষ্ণের সাহায্য খাণ্ডব দহন , কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীখন্ডি সাহায্য ভীষ্ম নিধন , অন্যায় যুদ্ধে কর্নবধ প্রভৃতি যুদ্ধ কি নীতিসম্মত । “ কহ মোরে শুনি মহারথী প্রথা কি হে এই মহারথী ?” তেজস্বিনী ক্ষাত্র ধর্মের দৃপ্ত প্রতিমা জনা । পুত্র শোকে তাঁর অন্তর দিবির্ন হয়ে যাচ্ছে তাই শোকে স্বামী নীলধ্বজকে জনা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উত্তেজিত করেছেন ।

কিন্তু ক্ষাত্র ধর্মের উদবুদ্ধ করতে ব্যার্থ জনা ক্ষোভে লজ্জায় ঘৃণায় আহত সপিনির মতো গর্জন করে উঠলেন ।


“ কী লজ্জা ! দুঃখের কথা হায় কব কারে ?”


স্বামী কৃষ্ণের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ভক্তির পথে চলেছেন আর র্জনা চলেছেন বীরের পথে । বিদ্রোহীনি জনা জানেন স্বামীর কাজ ক্ষাত্রধর্মী বিরোধী । পতি পরায়না স্ত্রী তাই রাজ পুর তথা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ । অধর্ম ও অকর্তব্য থেকে স্বামীকে উদ্ধার করতে পারেননি । তাঁর নিরুদ্ধ অশ্রুর মধ্যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়েছে । 

      “ ফিরি যবে রাজপুরে প্রবেশিবে আসি ,

      নরেশ্বর , ‘ কোথা জনা ?’ বলি ডাক যদি 

      উত্তরিবে প্রতিধ্বনি ‘ কোথা জনা ?’ বলি ।”


 জনা কিন্তু কৈকেয়ীর মতো স্বামীকে অপমানিত  করেননি । কেবল  দুঃখে ও মর্মবেদনার জ্বালায় হাহাকার করেছেন । স্বামীর প্রতি ভক্তি ছিল জনার আন্তরিকা । তাই স্বামী ভক্ত জনা বলেন 


     “ গুরুজন তুমি 

      পরিব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে ।”

এখানে মধুকবির নৈপুণ্যের তুলনা নেই । জনার একটি উচ্চাঙ্গের বীরাঙ্গনা রূপ এ পত্রিকায় গাঢ উজ্জ্বল বর্ণে অঙ্কিত হলেও তাঁর নারী রূপ যেন সাম্যক বিকশিত হয়নি । কিন্তু পত্রের শেষ অংশে চমৎকার নাটকীয় উপসংহারে চরিত্রটি অপরূপ হয়ে উঠেছে । এখানে আমাদের মনে পরে যায় , জনা চিরন্তন ভারতীয় নারীর স্বামীর চরণে বিদায় প্রাথনা না করে মহাযাত্রায় যেতে পারেন না তিনি । তিনি অভিমানবশে প্রাণ বিসর্জনের জন্য রাজপুরী ত্যাগ করেছেন বটে , কিন্তু স্বামীর জন্য তাঁর হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে । শূন্য ঘরে “ কোথা জনা ” বলে ডেকে রাজা যখন কেবল প্রতিধ্বনিই শুনতে পারেন , স্বামীর তখন কার সেই মমবেদনা অনুমান করে এই নারী অশ্রু সম্বরণ করতে পারছেন না , এখানেই জনার এই এক চিরন্তন সকরুণ নারী রূপ পাঠকের মানস পটে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ।




বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

সম্মিলিত মানবতার দৃশ্য যখনই দেখি , আমার মন খারাপ হয়ে যায় ।” সম্মিলিত মানবতার দৃশ্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? সেই দৃশ্য দেখে মন খারাপের কারণ কি প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours সম্মিলিত মানবতার দৃশ্য যখনই দেখি আমার মন খারাপ হয়ে যায় সম্মিলিত মানবতার দৃশ্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে সেই দৃশ্য দেখে মন খারাপের কারণ কি প্রশ্নোত্তর sommilito manobotar drissho jokhonoi dekhi amar mon kharap hoye jai sommilito manobotar drissho bolte ki bojhano hoyechhe sei drissho dekhe mon kharaper karon ki questions answer

উত্তর:- “ সম্মিলিত মানবতার দৃশ্য ” বলা হয়েছে ক্লাস স্ট্রীটের ভিড় কে ।  কলকাতার বিশেষ এক অফিস পাড়ার অফিস ছুটির সময় রাস্তার মোড়ে চাকুরী জীবীদের বাড়ি ফেরার তাড়ায় প্রচন্ড ভিড় হয় । কাজের মানুষদের এই ভিড়কেই বলা হয়েছে সম্মিলিত মানবতা ।

[       ] এই ভিড় দেখে লেখকের মন খারাপ হয় । কারণ , এ ভিড়ের মানুষগুলোর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বলে কিছু থাকে না । তারা যেন কারো ছেলে , কিম্বা বাবা , দাদা , স্বামী নয় , কেবল প্রবহমান ভিড়ে অংশ । তাদের মন বলে কিছুই নেই , যান্ত্রিক কারনেই যেন তারা নরে চরে বেড়ায় । সবাই যেন কোন উদ্দেশ্যে হীনতায় জড়ো হয়েছে । তাদের কারো দ্বারা কারো উপকার হয় না , অথচ , অস্বস্তি বাড়ে । সব মিলে যেন বিশাল একটা মাংসেরপিন্ড । কারো কোনো কাজে আসে না । বরং দাঁড়াতে , স্বাধীনভাবে হাঁটতে , বাসে উঠতে , বাসে একটু আরাম করে দাঁড়াতে অসুবিধার সৃষ্টি করে । ভিড়ের মধ্যে সহজে নিঃশ্বাস ফেলাও যায় না । ভিড়ের এই মানুষগুলো উপার্জনের তাগিদেই নিজের নিজের পরিবার ছেড়ে , আপনজনদের ছেড়ে যন্ত্রের মতো কাজের জগতে এসেছে । সারাদিন কাজ করে কারো না কারো আর্থিক লাভের কারণ হয়েছে । নিজে বিধ্বস্ত , ক্লান্ত হয়ে , ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যহীন  মাংসপিন্ড টাকে তাকে কোনরকমে টেনে নিয়ে চলেছে , অন্য কোনো ঠিকানায় । এই ক্লান্ত , স্বাতন্ত্র্যহীন , নিস্তেজ মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়েই লেখক বুদ্ধদেব বসুর মন খারাপ হয়ে যায় ।




বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

পারিবারিক নারী সমস্যা প্রবন্ধে অন্নদাশঙ্কর রায় নারীর দুঃখের কী কারণ নির্দেশ করেছেন ? আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours পারিবারিক নারী সমস্যা প্রবন্ধে অন্নদাশঙ্কর রায় নারীর দুঃখের কী কারণ নির্দেশ করেছেন আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর paribarik nari somossa probondho anndasankar ray narir dukher ki karon nirdeshe korechen alochona koro questions answer

উত্তর:- অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর “ পারিবারিক নারী সমস্যা ” প্রবন্ধে নারীর দুঃখের কারণ হিসেবে উপার্জনহীনতাকে নির্দেশ করেছেন । আমাদের সংসারে অর্থসংগ্রহের ভার থাকে স্বামী বা পুরুষের উপর । নারী সেই অর্থ ভোগ করে । পুরুষের উপার্জিত অর্থ না পেলে নারীর চলবে না । তাই , পুরুষের আশ্রয় তাকে নিতেই হয় । আর সে জন্য তাকে দাম দিতে হয় আত্মমর্যাদা ।  সে পুরুষের প্রভুত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয় । অধিকার দাবী করতে পারে না । বরং পুরুষের মন যুগিয়ে চলতে চায় , সেবা করতে চায় । তার জন্য ছলাকলার আশ্রয়ও গ্রহণ করে । পুরুষকে বেঁধে রাখতে না পারলে , তাঁর অর্থ ও সম্পদ না পেলে সন্তান সন্তনি নিয়ে নারীকে যে ভাসতে হবে তাই সেবা দিয়ে , সোহাগ দিয়ে , সতীত্ব দিয়ে পুরুষ কে তুষ্ট করে রাখতে হয় । এ জন্য নারীর মর্যাদা রক্ষা পায় না , নারীর স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না , ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম থাকে না । সে ক্রমশ দাসী হয়ে পড়ে । দাসীর জীবনে সুখ নেই পুরুষের ভোগের সামগ্রী বা ইচ্ছাপূরণের যন্ত্র হয়ে থেকে সুখ নেই । সে জন্য নারী দুঃখী । উপার্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হলে তবেই তাঁর দুঃখ ঘুচতে পারে বলে লেখকের ধারণা ।

মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১

জাতকের গল্প গুলি কোন কোন গুনে আকর্ষণীয় ? আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours জাতকের গল্প গুলি কোন কোন গুনে আকর্ষণীয় আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর jatoker golpo guli kon kon gune akorshonio alochona koro questions answer

উত্তর:- প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যে একমাত্র জাতকের গল্পগুলিকেই উপন্যাসের পূর্বসূচনা বলে লেখক জানিয়েছেন । পঞ্চতন্ত্র এবং ঈশপের গল্পেও বাস্তব জীবন চিত্রের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় । তবে উপন্যাসের লক্ষণগুলি জাতকের গল্পেই বেশি ফুটে উঠেছে । এ গল্পের স্রষ্টার উচ্চ আদর্শকেই কেবল ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেননি , সাধারণ নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জীবন চিত্রও তুলে ধরেছেন । বৌদ্ধসাধক বা ভিক্ষুদের চরিত্রকে বাস্তব সম্মত করে একেছেন । ভিক্ষুদের লোভ , স্বার্থসিদ্ধির বাসনা , ঈর্ষা , অহংকার, ভন্ডামি এসবকেও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপিত করা হয়েছে বুদ্ধদেবের নানা ধরনের চরিত্র এমন কি দস্যু ও চোর হিসেবেই তাকে দেখানো হয়েছে । কোনো সংস্কার বশত , তাঁর চরিত্র কে পরিশোধন করে পরিবেশন করা হয়নি । এখানেই গল্পগুলির সজীবতা , আকর্ষণীয়তা , পাঠক বা শ্রোতা চান গল্পের মধ্যে জীবন রসের আস্বাদন করতে । জাতকের গল্পে সেটা কিছুটা হয় বলেই গল্প গুলো আকর্ষণীয় ।

 

সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১

নিঃশব্দের তর্জনী প্রবন্ধে কোন বাংলা কবির নামোল্লেখ করা হয়েছে ? কোন প্রসঙ্গে ? আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours নিঃশব্দের তর্জনী  প্রবন্ধে কোন বাংলা কবির নামোল্লেখ করা হয়েছে কোন প্রসঙ্গে আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর nishobder torjoni probondhe kon bangla kobir nam ullekh kora hoyeche kon prosongo alochona koro questions answer

উত্তর:-“ নিঃশব্দের তর্জনী ” প্রবন্ধে লেখক শঙ্খ ঘোষ কবি জীবনাননন্দের নামোল্লেখ করেছেন । একালের সামাজিক মানুষের একটা প্রবণতা আড়ালে থাকা । নিজেকে অন্যদের কাছে আড়ালে রাখতেই সভ্য মানুষ কম কথা বলতে চান , নিঃশব্দে ভাব বিনিময় করতে চান । এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কবিতা রচনার ক্ষেত্রেও । আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ প্রথম অল্প কথায় পরিচিত শব্দ অপরিচিত অর্থে প্রয়োগ করে ইঙ্গিত ধর্মী কবিতা রচনা করেন । অবচেতন মনের রহস্যময় ভাব রাশিকে ব্যক্ত করা যায় না । ব্যক্ত করার ভাষাও নেই । তাই সে সকল রহস্যময় ভাব ব্যক্ত করতে চেনা শব্দের ইঙ্গিতবহ চিত্রকল্প বা প্রতীক ব্যবহার করেছেন । ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার চেষ্টাও করেননি । তাঁর হাত ধরেই স্বল্প শব্দের প্রতীকধর্মী কবিতার প্রচলন হতে থাকে । তাই লেখক প্রবন্ধে তাকে স্মরণ করেছেন ।

রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

সৎ প্রসঙ্গ প্রবন্ধের লেখক হিন্দুমুসলমানের বিবাদের কোন কারণ নির্দেশ করেছেন ? সেই কারণ কতদূর সঙ্গত প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours সৎ প্রসঙ্গ প্রবন্ধের লেখক হিন্দুমুসলমানের বিবাদের কোন কারণ নির্দেশ করেছেন সেই কারণ কতদূর সঙ্গত প্রশ্নোত্তর sott prosongo probondher lekhok hindu musolmaner bibader kon karon nirdesh korechen sei karon kotodur songotto questions answer

উত্তর:- “ সৎ প্রসঙ্গ ”  প্রবন্ধের লেখক মীর মশারফ হোসেন হিন্দু-মুসলমানের বিবাদের কোনো সঙ্গত কারণ খুঁজে পাননি । তবু বিবাদ হয় এবং সেই বিপদের কথা ফলাও করে আলোচনা করা হয় সর্বত্র । লেখক বিবাদের যে  কারণ অনুমান করেছেন তাহলো জাতিগত ঈর্শ্বা । অকারনেই এই দুই জাতি পরস্পরকে হিংসা করে । এক জাতি যদি কলা পাতার একটা দিককে পরিশুদ্ধ জ্ঞান করে তো অন্য জাতি সেই দিকটাকেই ঘৃণা করে । মুসলমানের পবিত্র “আজান” ধ্বনি হিন্দুর কানে বিষ ঢালে ,  আবার হিন্দু উপাসনার শঙ্খ , ঘন্টা , কাঁসরের ধ্বনি যেন মুসলমানের কর্নে শলাকা বিদ্ধ করে বধির করে তোলে ।

[       ] বিবাদে এই কারণ খুব গুরুতর নয় । এসব হল মতিভ্রম । মহৎ হিন্দু-মুসলমানের দ্বারা এই তুচ্ছ , অসঙ্গত কারণে কখনো বিবাদ ঘটে না । ঈর্স্বা প্রতিযোগিতার মানসিকতা থেকেও জন্মাতে পারে । তবে প্রতিযোগিতা হয় সমকক্ষের মধ্যেই । মুসলমান কখনোই হিন্দুর সমকক্ষ নয় কোন দিক থেকেই । তাই হিন্দুকে ঈশ্বা করাও মুসলমানের পক্ষে অনুচিত এবং অসঙ্গত  ।



শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

ভারত বর্ষের কোন প্রদেশেই বাংলার মতন রক্তের মিশ্রণ হয়নি । উদ্ধতিটি কার লেখা কোন রচনার অংশ ? রক্তের মিশ্রণ বলতে কি বোঝানো হয়েছে ? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে বলো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours ভারতবর্ষের কোন প্রদেশেই বাংলার মতন রক্তের মিশ্রণ হয়নি উদ্ধতিটি কার লেখা কোন রচনার অংশ রক্তের মিশ্রণ বলতে কি বোঝানো হয়েছে উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে বলো প্রশ্নোত্তর bharatbarsher kon prodeshei banglar moton rokter mishron hoini udhititi kar lekha kon rochonar angsho rokter mishron bolte ki bojhano hoyechhe uktitir tatporjo bujhiye bolo questions answer

উত্তর:-“  ভারতবর্ষের কোন প্রদেশেই বাংলার মতন.......” উদ্ধতিটি হুমায়ুন কবীরের লেখা “ বাংলা কাব্যের গোড়ার কথা ” প্রবন্ধের অংশ । এখানে রক্তের মিশ্রন বলতে সংস্কৃতির মিশ্রণ কে বোঝানো হয়েছে ।

[       ]  আমরা জানি বাঙালি একটা মিশ্রজাতি । মূলত , দ্রাবিড় মঙ্গোলীর জাতির মিশ্রণে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠে , এর উপর এসে পড়ে আর্য জাতির প্রভাবও বাঙলার আদিম অধিবাসী যদি মঙ্গোলীয় মানুষেরা হয় , তবে তাদের রক্ত অবিমিশ্র থাকে নি । অতি প্রাচীনকাল থেকে এই মঙ্গোলীয় জাতি আর দ্রাবিড় জাতির মিশ্রণ ঘটেছে । এই মঙ্গোলীয় জাতির মনোবৃত্তি ছিল অহিংস্ত্রতা । বাঙালির আচরণে এ বৈশিষ্ট্য আছে । তবে , দ্রাবিড় জাতি কাছ থেকে বাঙালি কোন বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে , তা বোঝা যায় না । লেখক বলেছেন “ হয়তো গোষ্ঠীপ্রীতি ও অলস নিষ্ক্রিয়তা দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় রক্তের সংমিশ্রণেরই ফল ।”

[      ] এরপর এসে মিশেছে আর্যরক্ত । তবে বাঙালির মধ্যে আর্যরক্তের অংশ কম । নিসর্গ প্রীতি , সংগ্রামশিলতা , আত্মপ্রত্যয় , লোকাতীতের সন্ধান , শাস্ত্রীয় অনুশাসনে মান্যতা এগুলি আর্য বৈশিষ্ট্য । বাঙলার কাব্যলোকে এই সবের পরিচয় ফুটে ওঠে । এগুলি আর্যরক্তের , অর্থাৎ আর্য সংস্কৃতির দান বলা যায় । তাই বলতেই পারি , কমপক্ষে তিনটি জাতির মিশ্রণে বাঙালী জাতি গড়ে উঠেছে যা , ভারতবর্ষের আরকোনো জাতির ক্ষেত্রে দেখা যায় না ।