বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির আবিষ্কার ও প্রকাশ সম্বন্ধে আলোচনা করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গ্রন্থটির গুরুত্ব নির্দেশ করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির আবিষ্কার ও প্রকাশ সম্বন্ধে আলোচনা করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গ্রন্থটির গুরুত্ব নির্দেশ করো প্রশ্নোত্তর

উত্তর :- বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য আবিষ্কারের পর সাহিত্য জগতে এক প্রবল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল । এটি রাধাকৃষ্ণ লীলা বিষয়ক পুরাতন ধরনের আখ্যান কাব্য ।

আবিষ্কার ও প্রকাশ : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আবিষ্কার করেন পন্ডিত বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্ধদ্ববল্লভ মহাশয় । ১৩১৬ বঙ্গাব্দে ( ইং ১৯০৯ ) বনবিষ্ণু পুরের কাছে কাঁকিল্যা গ্রামের জনৈক দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ে বাড়িতে এক গোয়াল ঘরে মাঁচা থেকে সঞ্চিত অনেক পুরাতন পুঁথির মধ্যে থেকে এটি আবিষ্কার করেছেন ।  


[       ] ১৩২২ বঙ্গাব্দে পরিষদ পত্রিকায় বসন্তরঞ্জন ও লিপিতত্ত্ব বিশারদ প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় দুজনে মিলিত হয়ে প্রাপ্ত পুঁথিটির লিপি বিচার করে এটিকে অতিশয় পুরাতন বাংলা আখ্যান কাব্য বলে নিধারিত করলেন । এর কয়েকমাস ১৩২৩ বঙ্গাব্দে ( ইং ১৯১৬ ) বসন্তরঞ্জনের সুযোগ্য সম্পাদনায় এই বৃহৎ পুঁথিটি “ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” নামে প্রকাশিত হল ।


ঐতিহাসিক গুরুত্ব : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য সম্পর্কে ভাষাতাত্ত্বিকেরা মন্তব্য করেছেন যে এতদিনে মধ্য যুগের বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন মিলল । বাস্তবধর্মী সমালোচকেরা রাধাকৃষ্ণের উদ্দাম - কাম - ক্রীড়ার মধ্যে বাঙালী সমাজে যথার্থ পরিচয় পেয়ে এটিকে মাটির কাছাকাছি কাব্য বলে মন্তব্য করেছেন । এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কে নানাভাবে ব্যক্ত করা যেতে পারে ।



বাংলা সাহিত্যে প্রভাব : বাংলা সাহিত্য এই কাব্যের প্রভাব সীমাহীন । বিশেষ করে বৈষ্ণব পদাবলীর ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম । দুটি সাহিত্যের মধ্যে একটি মিল রয়েছে । সেটি হল , উভয় সাহিত্যেই রাধাকৃষ্ণ বিষয়কে নিয়ে । তবে “ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” কাব্য যেখানে রাধাকৃষ্ণ চরিত্রর পরিণতি লাভ করেছে সেখানে বৈষ্ণবপদাবলীর রাধাকৃষ্ণের কাহিনী শুরু । কৃষ্ণ বিরহে রাধার “ অবস্থা রাধা বিরহে ” আছে 

“ যোগিনী 




এছাড়াও “ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” কাব্যটি চৈতন্যদেব কতৃক আস্বাদিত হয়েছিল বলে এর গুরুত্ব অপরিসীম ।



আখ্যান কাব্য হিসাবে গুরুত্ব : “ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” মূলত আখ্যান কাব্য । কিন্তু নানা স্থানে ও গীতিকাব্যের লক্ষণ সুস্পষ্ট । কবি প্রায়ই যবনিকার অন্তরালে রয়ে গেছেন কিন্তু সংগতি রক্ষা করেছেন পাত্রপাত্রীর সংলাপের মধ্যে দিয়ে । তাই সবদিক দিয়ে বিচার করে এটিকে গীতি ও সংলাপ মূলক আখ্যান কাব্য বলা যেতে পারে ।

ছন্দ ও আলংকারিক গুরুত্ব : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ছন্দের বৈচিত্রও বিশেষ লক্ষণীয় । 


এখানে দিগক্ষরা -.    “ একদিনে মনের উল্লাসে ।

                                  সখী মনে রস পরিহাসে ।।”



একাবলী -           “ আয়ী লা দেবের সুমতি গুণী 

                            কংসের আগেক নারদমুনি ।।”



ত্রিপদি , পয়ার প্রভৃতি ছন্দের মাধুর্য লক্ষণীয় । তাঁর অলংকারাদি বিশেষ উপভোগ্য । যেমন - কৃষ্ণ কতৃক রাধার রূপ বর্ণনা “ লবলী দল কোমল ” “ জুরু আ দেখি আ জেহন রুচিক অম্বল । ”

সমাজ ও ধর্মগত গুরুত্ব : এই কাব্য থেকে তৎকালীন সমাজ , রাজনীতি , মানুষের আচার আচরণ , প্রভৃতির সঙ্গে মানুষের ধার্মিকতার বিশদ পরিচয় পাওয়া যায় । 



[      ] সর্বোপরি বলতে হয় বড়ু চণ্ডীদাসের “ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” কাব্য খানি মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলেও এর অশ্লীলতা সম্পর্কে কোনও কোনও সমালোচক তিক্ত মন্তব্য করেছেন । কিন্তু এর জন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না । কারণ তিনি যে সময়ে এটি রচনা করেছেন সে সময়ের পরিবেশ কিছুটা স্থূল রুচির পরিচয় বহন করে । কিন্তু এই সামান্য ত্রুটিটুকু বাদ দিলে সাহিত্যের ইতিহাসে এটি অনবদ্য ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন