বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

চর্যাপদের আবিষ্কার ও পুঁথি সংক্রান্ত তথ্য বিবৃত করে এর সাহিত্যমূল্য নিরূপণ করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours চর্যাপদের আবিষ্কার ও পুঁথি সংক্রান্ত তথ্য বিবৃত করে এর সাহিত্যমূল্য নিরূপণ করো প্রশ্নোত্তর

উত্তর :- বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নির্দশন এই চর্যাপদ গুলি । মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হলেন এ গুলির আবিষ্কৃতা । তিনি নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “ হাজার বছরের পুরান বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা ” নামে প্রকাশ করেন ।



[       ] চর্যাপদ গুলিতে প্রায় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা ভাষার পরিচয় মুদ্রিত আছে । তখনো ভাষার অস্পষ্টতার জড়তা পুরোপুরি কেটে যায়নি । সেই আলো আঁধারি কালের ভাষাকে চিহ্নিত করা হয় “ সন্ধ্যা ভাষা ” নামে । এর ভাষা যেমন অস্পষ্ট  , ভাবও তেমনি হেঁয়ালি পূর্ন । বৌদ্ধতান্ত্রিক রীতিতে গৃহীত তাঁদের বিশিষ্ট নাম গুলিও লক্ষণীয় । যেমন - লুইপাদ , ভুসুকপাদ ,শবরীপাদ , কাহ্নপাদ , কুক্কুরিপাদ ইত্যাদি ।


[       ] চর্যাপদ রচয়িতারা তাঁদের নিজেদের রচনাকে গৃঢাথ রচনা বলে অভিহিত করেছেন । কিন্তু যতই গৃঢাথ পূর্ন হোক তাঁরা তাঁর প্রকাশ করতে গিয়ে পরিচিত জীবনের বাস্তব রূপক প্রতীকই ব্যাবহার করেছেন । তাই চর্যার তত্ত্বকথা   নিরস হয়ে ওঠেনি । আবার অনেক জায়গায় ব্যাঞ্জনাধর্মীতা প্রকাশ পেয়েছে । ভুসুকপাদের পদটি ব্যাধের আক্রান্ত হরিণ ও তাঁর সঙ্গিনীর বিরহকাতর চিত্রটি অপূর্ব ব্যাঞ্জনায় আভাশিত হয়েছে ।


           “ তিন ন চ্ছপই হরিণা পিবই না পানী ।

            হরিণা হরিণীর নিলঅ জানী ।”


এখানে এই ব্যাঞ্জনায় মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র হরিণীর হৃদয়ের সন্ধান পাওয়া যায় না তাবৎ বিরহী মানুষের হৃদয়ের কতরোক্তিও ফুটে উঠেছে । 


[       ] প্রকৃতির পটভূমিকায় রোমান্টিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় শবরপাদের ৫০নং সংখ্যায় । 


  “ হেরি যে মোর তইলা বায়ী মস: সমে সমতুলা ।

     যুকর এসে সে কপাসু ফুটিলা ।।

     তইলা বাড়ির পাশের জহ্ন বাড়ী ভাত্রলা ।

     ফিটেলি অন্ধারী যে আকাশ ফুলিয়া ।।

     কুঙ্গুচিনা পাকেলা রে শবরাশবরী মাতেলা ।

  অনুদিন সবোর কিম্লিন চেবই মহাসুহে ভেলা ।।”


নীল আকাশের নিচে একটি বাড়ী । বাড়ীর পাশে শুভ্র কাপডটি ফুল ফুটেছে । এ বাড়ির পাশে দেখা যায় জোৎস্না ধোওয়া আর একটি বাড়ি । আঁধার ঘুচল । আকাশে তারা ফুল ফুটল । কুঙ্গুচিনা পাকল । তাঁর তৈরী হাঁড়িতে খেয়ে শবর শবরী মাতাল হল । সুখে আনন্দে দিন কাটালো । প্রায় সমস্ত কবিতার মধ্যে কাব্যধম্মিতা ও গিতিময়তা প্রকাশ পেয়েছে । এমনি কাব্যময়তার প্রকাশ ঘটেছে চর্যাপদে 




“ উঁচা উঁচা পাবত তহি বসই সবরী বালী ।

মরঙ্গীপিচ্ছ পরহিন সরবি গীবত গঞ্জরীমালী ।

উমত সবরো পাগল সবরো মা করগুল গুহাজ তোহরি ।

নিঅ ঘরিনি নামে সহজ সুন্দরী 

নানা তরুবর মৌলিল রে গঅগত লাভোলি ভালি 

একেলি সবরি এবন হিন্ডই কুর্নকুন্ডলবজ্রধারী ।”



এছাড়া গৃহবধূর বেদনাও মমস্পর্শি ভাবে ফুটে উঠেছে । দরিদ্র বলে তাঁর কোনও প্রতিবেশী নেই । ঘরে নিদারুণ দারিদ্র্য , হাঁড়িতে ভাত নেই কিন্তু প্রতিদিনই অতিথি আসে 



       “ টালত মোর ঘর নাহি পরবেশী ।

       হাঁড়িতে ভাত নাহি নিতি আবেশি ।।”




এমনভাবে চর্যাপদের নানান পদে সাধারণ মানুষের কথাই ফুটে উঠেছে । চর্যাপদে নানান অলঙ্কার পরিস্ফুট হয়েছে । যেমন - উপমা , রূপক , উৎপ্রেক্ষা , শ্লেষ , অতীশয়ক্তি প্রভৃতি অর্থালংকার ও অনুপ্রাসের মতো শব্দলংকার । চর্যাপদের মধ্যে কোথাও কোথাও প্রবাদ প্রবচন দেখা যায় । এইভাবে ছন্দ , অলংকার , প্রবাদ প্রবচন সব মিলিয়ে চর্যাপদের কাব্যসৌন্দর্য এক অনুপম মহিমায় পর্যবসিত হয়েছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন