সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

বাল্মীকি রামায়নের অনুবাদ রচনায় কৃত্তিবাসের কৃতিত্ব আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

বাল্মীকি রামায়নের অনুবাদ রচনায় কৃত্তিবাসের কৃতিত্ব আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর বাংলা অনার্স  bengali honours valmiki ramayaner onubad rochonay kriti baser krititto alochona koro


               প্রশ্নের মান - ৫/৬



প্রশ্ন: বাল্মীকি রামায়নের অনুবাদ রচনায় কৃত্তিবাসের কৃতিত্ব আলোচনা করো ?


উত্তর:- কৃত্তিবাসের যে অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি হয়েছিলেন তার প্রমাণ তার রামায়ণের যত পুঁথি পাওয়া গেছে আর কোনো কবির কোনো কাব্যর এতো পুঁথি পাওয়া যায়নি । অবশ্য অত্যন্ত জনপ্রিয় তার জন্য তার কাব্যের ভাষা খুব বদলে গেছে । এ খন যে সমস্ত ছাপা রামায়ণ পাওয়া যায় তাতে মূল কৃত্তিবাসী রামায়নের অনেকখানি পরিবর্তিত হয়েছে ।



[   ] কবি কৃত্তিবাস সরল বাংলা পয়ার ত্রিপদী ছন্দে বাল্মীকি রামায়নের মূল কাহিনী কে অতি সংক্ষেপে বিব্রত করেছেন । সুতরাং তার রামায়ণ কে মূলের আক্ষরিক অনুবাদ না বলে বরং ভাবানুবাদ বলা চলে । অবশ্য তিনি মূল বাল্মীকি ছাড়াও অন্যন্যা রামায়ণ ও সংস্কৃত কাব্যদি থেকে অনেক কাহিনী গ্রহন করেছিলেন , কিন্তু নিজেও বানিয়ে দিয়েছিলেন । কেউ কেউ বলেন কৃত্তিবাস সংস্কৃত জানতেন না , পণ্ডিতদের মুখে বাল্মীকি রামায়ন ব্যাখ্যা শুনে শুনে বাংলায় রামায়ণ পাঁচালী রচনা করেন । এই অভিমতও যথাথ নয় । তার আত্মপরিচয় ও কুলজি গ্রন্থে তাকে " পণ্ডিত " ও " ধীমান " বলা হয়েছে । তিনি যে সংস্কৃতেও অভিজ্ঞ ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই । তবে তিনি লিখেছিলেন পাঁচালী আর বাল্মীকির রামকথা হল মহাকাব্য । সুতরাং তার রচনা যে আদিকবির তুলনায় অনেক নিরস তাতে কোন সন্দেহ নেই ।


[   ] কৃত্তিবাস বাঙালী জন সাধারণের উপযোগী করে  , পাঁচালীর ঢঙে মূল রামায়ণ কে পরিবেশন করেছিলেন । তাই এতে আর্য রামায়নের সুগভীর ভাষা বৈদগ্ধ , চিত্রকল্পের বৈচিত্র্য , রাম লক্ষণের চরিত্র প্রভূতি ততটা শিল্প সমুত্তকর্ষ লাভ করেনি তা স্বীকার করতে বাধা নেই । মূল রামায়ণের বীর রামচরিত্র  কৃত্তিবাসী রামায়নের ভক্তের ভগবানে পরিণত হয়েছেন , ক্ষত্রিয় বধূ সীতা হয়েছেন সর্বসংহা বাঙালী কূল বধূ  , হনুমানের রঙ্গরস প্রভূতিও বাঙালী সংস্কৃতিরই পরিচায়ক । এককথায় কৃত্তিবাস মূল রামায়ণ কে অনেক টা বাঙালীর মন: প্রকৃতির অনুকূলে সাজিয়েছেন । তাই তার গ্রন্থ বাঙালীর জীবনে এত গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে । ভক্ত কালীদাস যেমন পরবর্তী কালে উত্তর ভারতে রাম কথার এক নতুন রূপ দিয়েছিলেন , তার আগে  কৃত্তিবাস বাংলাদেশে তারই সূচনা করেছেন । বস্তুত কৃত্তিবাসী রামায়ন ভক্তি গ্রন্থেই পরিণত হয়েছে । এতে যে রামনামতত্ব প্রচারিত হয়েছে , তাই চৈতন্য যুগে নতুন রূপে ও পরিবেশে অভিনব রূপ লাভ করেছে । রাম , লক্ষণ , সীতা বাঙালীর ঘরের মানুষ হয়ে গেছেন , বাঙালীর সমগ্র জীবনকেই কৃত্তিবাসী গ্রন্থ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ধরেছে । মধ্য যুগিয় কোন কাব্য কে যদি জাতীয় কাব্য বলতে হয় , তবে সে গৌরব কৃত্তিবাসী রামায়ণেরও প্রাপ্য এবং এই রামায়ণ রচনায় কবি কৃত্তিবাসের কবিত্বও প্রশংসনীয় ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন