গণদেবতা অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১। " গণদেবতা " উপন্যাস টি কোন পত্রিকায় কি নামে প্রকাশিত হয় ?
উত্তর:- " গণদেবতা " উপন্যাসটি " ভারতবর্ষ " পত্রিকায় " চন্ডিমন্ডপ " নামে প্রকাশিত হয় ।
২। " গণদেবতা " উপন্যাসটি গ্রন্থকারে কত সালে প্রকাশিত ? এই উপন্যাসের পরের অংশ টি কী নামে পরিচিত ?
উত্তর:- " গণদেবতা " উপন্যাসটি গ্রন্থকারে প্রকাশিত হয় ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে ( ১৯৪২ সালে ) । এর পরবর্তী অংশটি " পঞ্চগ্রাম " উপন্যাস নামে পরিচিত ।
৩। " গণদেবতা " উপন্যাসের জন্য লেখক তারাশঙ্কর কত সালে কোন বিশেষ পুরষ্কার লাভ করেন
উত্তর:- " গণদেবতা " উপন্যাসের জন্য লেখক তারাশঙ্কর ১৯৬৭ সালে " জ্ঞানপীঠ " পুরষ্কার লাভ করেন
৪। যে পাঁচটি গ্রামের বিষয় নিয়ে " গণদেবতা " উপন্যাসের আখ্যান গড়ে তোলা হয়েছে , তাদের নাম কি ? উপন্যাসে কোন গ্রামটি প্রাধান্য পেয়েছে ? কেন ?
উত্তর:- উপন্যাসের পাঁচটি গ্রাম হল - শিব পুর , কালী পুর , কঙ্কনা , মহাগ্রাম , দেখুরিয়া ও কুসুম পুর । শিব পুর ও কালী পুরকে একত্রে " শিবকালীপুর " একটা গ্রাম । এই গ্রামে প্রধান চরিত্র গুলির বাড়ী , তাই শিবকালীপুর গ্রাম প্রাধান্য পেয়েছে ।
৫। গ্রামের কোন সমস্যা নিয়ে " গণদেবতা " উপন্যাসের সূত্রপাত হয় ?
উত্তর:- গ্রামের কর্মকার অনিরূধ এবং ছুতার গিরিশ ধান চুক্তিতে আর গ্রামের কাজ করে না । তারা ময়ূরাক্ষীর ওপারে জংশন শহরে দোকান করে নগদ পয়সায় কাজ করে । এতে চাষের সময় লাঙ্গল তৈরী , লাঙলের ফাল বাড়ানো , ইত্যাদি কাজ থেকে গ্রামের মানুষ বঞ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এই সমস্যার বিচার নিয়েই উপন্যাসের সূচনা ।
৬। " এই ব্যাপার লইয়া অনিরুদ্ধ এবং গিরিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষের সীমা ছিল না ।" কোন ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর:- " এই ব্যাপার " বলতে অনিরুদ্ধ কামার ও গিরিশ ছুতারের ধান চুক্তিতে কাজ না করার । নগদ পয়সায় কাজ করার সিদ্ধান্ত কে বলা হয়েছে । গতানুগতিক প্রথায় তাদের আর তেমন হয় না । তাই ধান চুক্তিতে কাজের প্রথার বিরুদ্ধে অনিরুদ্ধ ও গিরিশের সিদ্ধান্ত অসন্তোষের কারণ হয়েছে ।
৭। শিবকালী পুরের মানুষকে কোন নদী পার হয়ে জংশন স্টেশনে যেতে হয় ? ভরা কালে সেই নদীর খেয়া পার হতে কত সময় লাগে ?
উত্তর:- জংশন স্টেশনে যেতে ময়ূরাক্ষী নদী পার হতে হয় । ভরা কালে এই নদীর খেয়া পার হতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায় ।
৮। গ্রামের মানুষের লাঙলের ফাল পাঁজানো , চাকায় হাল পরানো , কাস্তে ইত্যাদি বানানোর জন্য অনিরুদ্ধ কী পেত ? তাতে তাঁর আপত্তি কেন ?
উত্তর:- গ্রামের চাষীদের ফাল পাঁজানো ইত্যাদি কাজ করে অনিরুদ্ধ হাল প্রতি পাঁচ শলী ধান পেত । কিন্তু , এই সামান্য পরিমাণ ধানও সকলে সময় মতো পরিশোধ করত না , বাকী রাখত ; তারপর আর দিত না । তাই , ধান চুক্তিতে কাজ করতে অনিরুদ্ধর আপত্তি ।
৯। ছিরু পাল অনিরুদ্ধের কাছে পাওনা হিসেবে কত টাকা দাবী করে ? অনিরুদ্ধ তাকে কত টাকা দিয়ে হ্যান্ডনোট ফেরত চায় ?
উত্তর:- ছিরু পাল ধার দেওয়া দশ টাকার সুদ সহ হিসেব করে পঁচিশ টাকা ন আনা তিন পয়সা দাবী করে । অনিরুদ্ধ তাকে পঁচিশ টাকা দশ আনা দিয়ে হ্যান্ডনোটখানা ফেরৎ চায় ।
১০। শ্রী হরি অনিরুদ্ধের অপমানের প্রতিশোধন কীভাবে নেই ?
উত্তর:- শ্রী হরি অনিরুদ্ধের দুই বিঘা বাকুড়ির আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে প্রতিশোধ নেই ।
১১। শ্রী হরি প্রথম দিকে নিজের সম্পদ বাড়াতে কোন কোন উপায় অবলম্বন করেছিল ?
উত্তর:- নিজের সম্পদ বাড়াতে শ্রী হরি চুরির পথ অবলম্বন করে । করাত দিয়ে শব্দ না করে পড়ের ঝাড়ের বাঁশ কেটে রাতারাতি নিজের পুকুরে ফেলে রাখে । জাল ফেলে পরের পুকুরের মাছ ধরে এনে নিজের পুকুরে বোঝায় করে । বর্ষায় পাঁচিল ফেলে দিয়ে নতুন পাঁচিল তোলার সময় অন্যের জমি চাপিয়ে নেই ।
১২। গ্রামের চন্ডী মন্ডপে কী কী অনুষ্ঠিত হত বলে উপন্যাসে উল্লেখ আছে ?
উত্তর:- গ্রামের চন্ডী মন্ডপে বিচার সভা , গ্রাম্য কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা সভা , কীর্তন , কবি গান ইত্যাদি আসর , ধর্মীয় অনুষ্ঠান , পাঠশালার পঠন পাঠন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হত ।
১৩। অনিরুদ্ধের বাকুরির ধান চুরির পুলিশি তদন্তে ছিরু পাল কীভাবে নিজেকে বাঁচায় ?
উত্তর: ধান চুরির অপরাধ থেকে বাঁচতে ছিরু পাল থানার জমাদার কে পঞ্চাশ টাকা ঘুষ দিয়ে রাখে ।
১৪। ছিরু পালের কয়টি সন্তান ? তার পরিবারের আপন জন বলতে কে ছিল ?
উত্তর:- ছিরু পালের সাতটি সন্তান জন্মালেও বেঁচে আছে দুজন । পরিবারে তার আপনজন বলতে ছেলে দুটি ছাড়াও স্ত্রী এবং মা ছিলেন ।
১৫। চন্ডীমন্ডপের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে দেবু পন্ডিতের বলা সংস্কৃত কথাটি কী ? তার অর্থ বা কী ?
উত্তর:- চন্ডীমন্ডপের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে দেবু পন্ডিত উচ্চারিত সংস্কৃত কথাটি হল " যাবচ্ছন্দ্রাকর্মোদিনী । " এর অর্থ হল যতদিন চন্দ্র সূর্য পৃথিবী টিকে থাকবে , ততদিন চন্ডীমন্ডপও টিকে থাকবে ।
১৬। ছিরু পালের এমন চারটি অপরাধের উল্লেখ করো যাঁর কারণে ছিরু পালের কারাবাস হওয়া উচিত ।
উত্তর:- ছিরু পালের অপরাধ গুলি হল - ক) বিড়ির আগুনে পাতুর ও বায়েন দের গৃহদাহ করা ।
খ) অনিরুদ্ধর জমির ধান রাত্রে কেটে নেওয়া ।
গ) আঙ্গটজুতির জন্য পয়সা চাওয়ায় পাতু বায়েনকে নির্মম প্রহার করা ।
ঘ) মিথ্যা অভিযোগে দেবনাথ পন্ডিত কে ১৫ মাস জেলে পাঠানো ।
১৭। পাতু মুচির পদবী কী ? তার উপার্জনের পথ কী ছিল ?
উত্তর:- পাতু মুচির পদবী ছিল বায়েন । বায়েনরা সাধারনত ঢাক বাজায় । তবে পাতুর উপার্জনের আরো পথ ছিল । যেমন - ( ক) কিছু চাকরান জমি ছিল । ( খ) দেবত্র জমির ধান পিছু পেত ( গ) নিজের হাল বলদে চাষ করত ( ঘ ) ভাগাড়ের গরুর চামড়া ছাড়িয়ে বিক্রি করত ।
১৮। ত্রিপুরা সিং কে ? সে কয়বার গাঁয়ের দরিদ্র মানুষের ঘরে আগুন দিয়েছে ?
উত্তর:- ত্রিপুরা সিং দুর্গা পুরের এক মহাজন ও ছোট খাট জমিদার । অত্যন্ত শক্তিশালী , পরিশ্রমী এবং অত্যাচারী মানুষ । সে তিনবার গাঁয়ের মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে । গাঁয়ের মানুষকে বশে রাখা এবং মহাজনী ব্যাবসার প্রসার ঘটানো ।
১৯। গরীবদের ঘর পোড়াবার পর শ্রীহরি শয়তান না হয়ে মহান হয়ে ওঠে কীভাবে ?
উত্তর:- ঘর পোড়াবার পর নিজের রাখাল ও তাঁর পরিবারের দুর্দশার কথা ভেবে তাদের কিছু চাল , ধান ও খড় দিতে স্বীকৃত হয় । পড়ে পাড়ার অন্যদের ও পাঁচসের করে চাল , ঘর ছাইবার খড় ও কিছু ধান সাহায্য দেবার কথা ঘোষণা করে । তাতেই তার জয়জয়কার হয় । সে শয়তান না হয়ে " মহান " হয়ে যায় । আরো অনেক মহৎ কাজেরও সংকল্প করে ।
২০। " জগন নোটিশ খানা দেখিয়া গর্জন করিয়া উঠিল - ইয়ার্কি নাকি ? এসব কি পৈতৃক জমিদারী পেয়েছে সব ।" জগন কে ? নোটিশ টা কী ছিল ?
উত্তর:- " জগন নোটিশ খানা দেখিয়া গর্জন করিয়া উঠিল " জগন হল শিবকালীপুরের ডাক্তার জগন্নাথ ঘোষ । পুরুসা ক্রমে তারা ডাক্তার । তবে মানবদরদী । গাঁয়ের কাউকে চিকিৎসা করে সে পয়সা নেয় না । গাঁয়ের গরীব দুঃখীদের ভালো করবার আকুলতা তার আছে ।
নোটিশ টা ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে আসার ও আশ্বিন দুই কিস্তির ট্যাক্স জমা দিতে হবে । নইলে দেড়গুণ সুদ সহ জমা দিতে হবে । গরীব চাষীদের উপর এই রকম অত্যাচার সহ্য করা যায় না বলেই জগন ক্রুদ্ধ হয়ে গর্জন করে ।
২১। দেবু পন্ডিতের পুরো নাম কি ? সে কতদূর পর্যন্ত লেখাপড়া শিখেছিল ? তাঁর উপার্জনের রাস্তা কী ?
উত্তর:- দেবু পন্ডিতের পুরোনাম দেবনাথ ঘোষ । সে ফাস্ট ক্লাস পর্যন্ত লেখাপড়া করে ছিল । বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে চাপায় আর এগোতে পারেনি । দেবু পণ্ডিতের উপার্জনের রাস্তা ছিল পাঠশালায় পন্ডিতি এবং কৃষানের সাহায্য চাষ । জেল খেটে আসায় তার পন্ডিতের চাকরি ঘুচে গেলেও চাষ বজায় থাকে ।
২২। " গণদেবতা " উপন্যাসে ছিরু পালের বাবার পরিচয় কতটা দেওয়া হয়েছে ? উল্লেখ করো ।
উত্তর:- উপন্যাসে ছিরু পালের বাবার পরিচয় নেই বললেই চলে । শুধু জানা যায় তার বাবার নাম ব্রজবল্লভ । নামটা গুরুগম্ভীর হলেও মানুষটা হালকা ছিল । সাধারণ এক চাষী । তেমন বুদ্ধিমান বা চালাক চতুর ছিল না । তবে পরিশ্রমী ছিল ।
২৩। কোন সূত্রে দেবুর বউকে দুর্গা বিলু দিদি বলে ? উল্লেখ করো ।
উত্তর:- দেবু পন্ডিতের বউ বিলুর বাপের বাড়ি আর দূর্গার মায়ের বাপের বাড়ি একই গাঁয়ে । দূর্গার দিদিমা বিলুর বাপের বাড়িতে কাজ করত । দূর্গার মা বাপের বাড়িতে গেলে বিলুকে কোলে পিঠে করিত । এই সূত্রেই বিলু দূর্গার দিদি বিলু দিদি ।
২৪। ইতু লক্ষ্মীর পূজা কী উদ্দেশ্য কাকে পূজা ?
উত্তর:- ইতুলক্ষ্মীর পূজা হল রবি শস্যের কল্যাণ কামনায় সূর্য দেবতার পূজা ।
কোন মন্তব্য নেই