বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

বাংলায় লেখা চৈতন্যজীবনী সংক্রান্ত গ্রন্থ গুলি উল্লেখ করো । এই ধারায় শ্রেষ্ট গ্রন্থ কোনটি এবং কেন সে বিষয়ে তোমার অভিমত দাও প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours বাংলায় লেখা চৈতন্যজীবনী সংক্রান্ত গ্রন্থ গুলি উল্লেখ করো এই ধারায় শ্রেষ্ট গ্রন্থ কোনটি এবং কেন সে বিষয়ে তোমার অভিমত দাও প্রশ্নোত্তর

উত্তর:- বাংলার সমাজ ও সাহিত্যে শ্রীচৈতন্যর মতো জ্যোতিষ্ক কে নিয়ে গড়ে উঠেছিল বিশাল জীবনী সাহিত্যের ধারা । মূলত এই ধারা ছিল নতুন । কারণ সে সময় সাহিত্যে দেব দেবীর মাহাত্ম বর্ণিত হত সেই সময়ে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক জীবনী ধারা প্রবাহিত থাকল । তাঁকে কেন্দ্র করেই নানা সাহিত্যে গড়ে উঠেছিল ।


চৈতন্যজীবনী কাব্যসমূহ : ( ১) বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত ( ২ ) লোচনদাসের চৈতন্যমঙ্গল  ( ৩ ) জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল  ( ৪ ) কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি ।



বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত - বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম চৈতন্য বিষয়ক কাব্য হল বৃন্দাবন দাসের “ চৈতন্যভাগবত ” । এটি “চৈতন্যমঙ্গল ” নামেও পরিচিত ছিল । ভাগবতে যেমন কৃষ্ণলীলা বর্ণিত আছে চৈতন্য ভাগবতেও চৈতন্যলীলা বর্ণনা করা আছে । উভয় কাব্যের মধ্যে বহু অলৌকিক বিষয় সংযুক্ত ছিল ।


কবি পরিচয় : এই কাব্যে কবি বৃন্দাবন দাসের আত্মপরিচয় অতি সংক্ষিপ্ত । তাঁর যেটুকু বিবরণ পাওয়া যায় তাতেও তাঁর মায়ের নামই প্রধার্ন্য পেয়েছে । কবি জননী নারায়ণী ছিলেন শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পুত্রি এবং বাল্যবিধবা । কবির দীক্ষাগুরু ছিলেন শ্রীচৈতন্যের নবদ্বীপ লীলার নিবিড় সহচর শ্রীনিত্যানন্দ ।




রচনাকাল : জননীর প্রেরণায় দীক্ষাগুরু নিত্যানন্দের প্রেরণায় তিনি কাব্যটি রচনা করেন । নিত্যানন্দ , অদ্ধৈত আচার্য এবং অন্যান্য পার্ষদের কাছ থেকে বৃন্দাবন দাস কাব্যের উপকরণ সংগ্রহ করেছিলেন । কবির জন্মকালের মত তাঁর কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে মতভেদ আছে । কবির জন্মকাল সম্ভবত ১৫১৯ খ্রী: বা তাঁরও কাছাকাছি সময়ে এবং কাব্য রচনাকাল সম্ভবত ১৫৪২ খ্রী: ।


বিষয়বস্তু : চৈতন্যভাগবত আদি , মধ্য , অন্ত এই তিনটি খন্ডে বিভক্ত । শ্রীমদভাগবতের কৃষ্ণলীলার মতো এতে চৈতন্যলীলা বর্ণিত হয়েছে । শ্রীচৈতন্যর বাল্যলীলা , সন্ন্যাসপূর্ব জীবনের বর্ণনায় কল্পনা ও অলৌকিক ঘটনায় ছড়াছড়ি । বৃন্দাবন দাসের কাব্যের মূল উৎস ছিল নিত্যানন্দ , তাঁর বাল্যসঙ্গী । নীলাচল লীলায় তিনি সঙ্গে ছিলেন না বলে কবিকে মুরারী গুপ্তের উপর নির্ভর করতে হয় । 



ঐতিহাসিকতা : বৃন্দাবন দাসের কাব্যটি সেকালে এবং একালে সমাদর লাভের মূল কারণ হল এর তথ্যপূর্ণ ঐতিহাসিকতা । এই কাব্যে অলৌকিক ঘটনা যেমন রয়েছে তাঁর পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্যও বর্তমান । এই কারণে একে মধ্যযুগের ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য দলিল নামে অভিহিত করা যায় । এটিতে তৎকালীন নবদ্বীপের ঐশ্বর্যখ্যাতি , বুদ্ধিজীবী ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সম্প্রদায়ের প্রাধান্য লক্ষ করা যায় । ঐতিহাসিকদের মতে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের বাংলা ও বাঙালীর সামাজিক ও নৈতিক জীবনের একখানি অন্যতম প্রামাণিক গ্রন্থ এটি ।


[       ] সর্বশেষ একথা বলতে হয় , সহজ সরল ঘটনা বর্ণনায় এবং কল্পনার সুদুরাভিসারে গ্রন্থ খানি অসাধারণ । প্রাঞ্জল ভাষা , প্রধানত পয়ার , কোথাও কোথাও ত্রিপদী রয়েছে । শ্রীচৈতন্যর আধ্যাত্মিক মহিমায় গভীর বিশ্বাসী হয়েও তিনি মানবিক আবেদনের প্রতি উদাসীন থাকেননি এখানেই তাঁর সার্থকতা ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন