বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

“ জলসাঘর ” গল্পে মহিম গাঙ্গুলী চরিত্রটি কতটা গুরুত্ব পেয়েছে এবং সৃষ্টি হিসেবে কতটা সার্থকতা লাভ করেছে , আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

বাংলা অনার্স সাম্মানিক bengali honours জলসাঘর গল্পে মহিম গাঙ্গুলী চরিত্রটি কতটা গুরুত্ব পেয়েছে এবং সৃষ্টি হিসেবে কতটা সার্থকতা লাভ করেছে আলোচনা করো প্রশ্নোত্তর jalsaghor golpe mohim Ganguly choritro ti kotota gurutto peyeche abong srishti hisebe kotota sarthokota lav koreche alochona koro

উত্তর:- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ জলসাঘর ’ গল্পের একটি প্রয়োজনীয় পার্শ্ব চরিত্র মহিম গাঙ্গুলী । গল্পের যেটা বক্তব্য , সেটা স্পষ্ট করে তুলতে এ চরিত্রটি অপরিহার্য ছিল । এগল্পের মূল বিষয় হলো ধণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামন্ততন্ত্রের অবলুপ্তি । সেই  প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা পক্ষের প্রতিভূ হলেন মহিম গাঙ্গুলী । মহাজনি ব্যবসার মাধ্যমে তিনি অশেষ ধরনের  অধিকারী হয়েছেন , আর ধনের প্রাচুর্য্যই তার মনে জাগিয়ে তুলেছে অহংকারবোধ । গল্পে আমরা যে কবারই মহিম গাঙ্গুলীর সাক্ষাৎকার পাই , প্রতিবারই তার কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে কিছু না কিছু অহংকারের প্রকাশ ঘটতে দেখি ।

[       ] মহিম গাঙ্গুলী প্রচুর ধরনের অধিকারী হলেও মনটা উদার ছিল না তার । যথেষ্ট ঈর্ষাপরায়ণ এবং ক্রু ছিলেন । আর্থিক দিক থেকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া জমিদার রায় বংশের সপ্তম পুরুষ বিশ্বম্ভর রায়কে মানুষ হুজুর বলত , অথচ , মহিমকে কেউ তেমন খাতির করত না । এটা মহিমের ভালো লাগতো না । হিংসে হত । সেই হিংসা বশতই তিনি যে কোনো ছুতোয় রায় মশাইকে আঘাত করতে চাইতেন । তার যে হুজুর তার যে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই , এ কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে নিষ্ঠুর তৃপ্তি অনুভব করতেন ।

[       ] ছেলের মুখেভাত উপলক্ষে বিপুল আয়োজন করেছেন লখনৌ থেকে দুইজন বাইজি আনিয়ে জলসার ব্যবস্থা করেছেন । সেই জলসায় রায় মশাইকে নিমন্ত্রণ করবার জন্য মহিম নিজে গিয়েছেন রায়বাড়ীতে । বলেছেন “ রাত্রে পায়ের ধুলো দিতেই হবে । ... শখ করে লখনৌ থেকে বাইজী আনিয়েছি । তাদের গানের কদর আপনি ভিন্ন আমরা বুঝব না ।” রায়মশাই  যেতে পারবে না জানালে মহিম গাড়ী পাঠাবার  প্রস্তাব দিয়েছেন । ফেরার সময় এমন সব কথাবার্তা বলেছেন যে আপাতত দৃষ্টিতে নির্দোষ মনে হলেও কথাগুলোর উদ্দেশ্য ছিল রায়মশায়ের অন্তরের জ্বালা ধরানো । তাঁর ,গাড়ি আছে সদরের সাহেব সুবদের সঙ্গে দহরম আছে , লখনৌ বাইজিদের পেছনে টাকা ঢালবার সামর্থ্য আছে , বিশ্বম্বরের এসব কিছুই নেই , তিনি সামর্থ্যহীন নিঃস্ব । মহিমের বাবা জনার্দনও রায় মশাই কে হুজুর বলে সম্মান করছেন , কিন্তু মহিম ‘ হুজুর ’ শব্দটি ব্যবহার করেন না , রায়মশাই কে বলেন ‘ ঠাকুরদা ’।

[      ] বৃদ্ধ হয়েছেন , শরীর নিয়মের ব্যতিক্রম সয় না , এই সব অজুহাত দেখিয়ে বিশ্বম্বর মহিমের বাড়িতে খেতে এবং বাইজিদের নৃত্যগীত । নিষ্ঠুর মহিম রায়মশাই কে বিড়ম্বনার মধ্যে ঠেলে দিয়ে মোজা উপভোগ করতে চাইলেন । বিদায়ের দিন  বাইজিদের বিদায় করে বলে দিলেন ,  রায় বাড়ি ঘুরে যেতে । “ বিশ্বম্বর রায় সমঝদার আমির লোক । গাওনা হয়তো হতে পারে ।” নিঃস্ব   বিশ্বম্বর বাইজীদের মজুরী দিতে পারবেন না । আবার গাওনা না করে ফিরিয়ে দেবার লজ্জাও সইতে পারবেন না । গাঙ্গুলীর এই কুট চাল নায়েব তারাপ্রসন্ন যেমন বুঝেছেন , পাঠকেরা ও বুঝেছেন । কিন্তু মহিমের দেওয়া এই যন্ত্রণার পরিণতি রায় মশায়ের পক্ষে ভয়ংকর হয়েছে ।

[       ] রায় মহাশয় বাইজিদের ফেরান নি । সর্বস্বের বিনিময়ে রায়বংশের মর্যাদা রাখতে জলসাঘরে জলসার আয়োজন করেছেন । সেখানে মহিম গাঙ্গুলীরও নিমন্ত্রণ হয়েছে । মহিম জলসা ঘরে উপস্থিত হয়ে কেবল নিজের চাকচিক্যের ফিরিস্তি দিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন । রায়বাড়ীর , সাবেক আভিজাত্যপূর্ণ আসবাবগুলিকে উপহাস করতে চেয়েছেন । ঘরে আলো কম বলে নায়েব তারাপ্রসন্ন কে বলেছেন , “ দেখুন আলো , বেশ খোলে নি । আমার ড্রাইভার কে বলে দিন , দুটো পেট্রোম্যাক্স নিয়ে আসুক ।” তাকিয়ায় ধূলো বলে ঘৃণাভরে সরিয়ে দিয়েছেন । মজলিস চলার সময় মনিবের আগেই বাইজিকে বখশিস দেবার ধৃষ্টতাও দেখিয়েছেন ।


[       ] এই সব কারণ থেকেই বোঝা যায় , মহিমের অহংকার তারা শিষ্টতাকে ঘুছিয়ে দিয়েছে । শিষ্টতার অভাবও ধনতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য । এ গল্পের মহিম চরিত্রটি ধনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য গুলিকেক যেন ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেছে আর তারই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বম্বর রায়ের চরম বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে । অর্থাৎ , এ গল্পের বক্তব্য প্রতিষ্ঠানয় মহিম গাঙ্গুলী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন  ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন